শিশুদের মেধা ও শরীরিক বিকাশের বিনোদন কেন্দ্রের বিশেষ করে শিশু পার্কের বিকল্প নেই। অথচ দেশের অন্যতম মেগা শহর চট্টগ্রাম এখন শিশু পার্কহীন। চট্টগ্রাম নগরে এতদিন তিনটি শিশু পার্ক ছিল। যেগুলো ১৯৯০ সালের পর সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু গত নয় মাস ধরে এগুলো বন্ধ। ফলে শিশুরা স্কুল ও বাড়ির চার দেয়ালের মাঝে আটকা পড়ছে। বাসায় থাকলে বেশির ভাগ শিশুর সময় কাটানোর অনুষঙ্গ হয়ে ওঠছে প্রযুক্তির ব্যবহার। বিশেষ করে মোবাইল ও টিভি। অনেক অভিভাবকই তাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। জানা যায়, ১৯৯১ সালে প্রথম গণপূর্ত অধিদপ্তরের আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠের একাংশে কর্ণফুলী শিশু পার্কের জন্য ৯ একর জমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) ইজারা দেওয়া হয়। ২০০০ সালে পার্ক নির্মাণ করে আনন্দমেলা লিমিটেড। কিন্তু গত ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেটি বন্ধ। এখন তারা আর সেটি চালাবে না। এরপর ২০০৬ সালে ১১ একর জায়গার ওপর বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনার রেপ্লিকা নিয়ে নগরের চাদগাঁওয়ে তৈরি করা হয় জিয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স। পরে স্বাধীনতা কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়। এই কমপ্লেক্সে সংসদ ভবন, শহীদ মিনার, সোনা মসজিদ, কান্তজির মন্দির, আহসান মঞ্জিল, সুপ্রিম কোর্ট ও স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকা আছে। পার্কের মূল আকর্ষণ ছিল প্রায় ২০০ ফুট উঁচু টাওয়ারে থাকা ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ। ২৩ তলা উচ্চতায় অবস্থিত এই রেস্তোরাঁ থেকে একনজরে পুরো চট্টগ্রাম শহর ও কর্ণফুলী নদী দেখার সুযোগ ছিল। তাছাড়া ১৫টির বেশি রাইড, ছোট-বড় রেস্তোরাঁ ছিল পার্কের ভিতর। গত ৫ আগস্টের পর এটিও বন্ধ।
নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জায়গায় চসিক একটি প্রাইভেট কোম্পানিকে পার্ক করতে বরাদ্দ দিয়েছিল। জিয়া স্মৃতি শিশুপার্ক নামের সেই পার্কটি ২০২৩ সালে সরকার উচ্ছেদ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে জায়গা বুঝিয়ে দেয়। ফলে তিনটি পার্কই গত ৯ মাস ধরে বন্ধ। গত ১২ মে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সার্কিট হাউস এবং তার পাশের বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত প্রাঙ্গণকে (প্রায় ৩.৮৯ একর) একটি সর্বজনীন নাগরিক মুক্তাঙ্গন হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, স্বাধীনতার পর সাড়ে পাঁচটি দশক পার করল। অথচ এখনো পর্যন্ত একটি স্থায়ী শিশু পার্ক তৈরি করা হলো না। যে তিনটি ছিল, সেগুলোও এখন বন্ধ। তাহলে আমাদের শিশুরা যাবে কোথায়। কোথায় এতটুকু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলবে। উন্মুক্ত জায়গা কমার কারণেই শিশুরা এখন প্রযুক্তিমুখী হয়ে যাচ্ছে। এটা প্রজন্মকে পরোক্ষভাবে বিকলাঙ্গ করার নামান্তর।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, শিশুর মনোবিকাশে খেলার মাঠ, বিনোদনের স্থান, উন্মুক্ত স্থান অত্যাবশ্যকীয় একটি অনুষঙ্গ। শিশুর মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ না থাকলে এর দীর্ঘমেয়াদ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্ক নতুন করে ইজারা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং স্বাধীনতা কমপ্লেক্স নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি এ দুটি পার্ক নিয়ে একটি ইতিবাচক সমাধানে আসা যাবে।