নোট সঙ্কটের জেরে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে চীনের সরকারি মিডিয়া নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছেন। দুর্নীতি রুখতে নরেন্দ্র মোদির সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা চমকে ‘আকস্মিক এবং সাহসী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে চীনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস।
তবে ভারত থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে শুধু ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেওয়া যথেষ্ট নয় বলেও লেখা হয়েছে ওই চীনা কাগজে। ‘বেজিং অফারস ক্লুজ ফর মোদি'জ নিউ অ্যান্টি-করাপশন মুভস’ (মোদীর নতুন দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের জন্য বেজিং-এর কিছু পরামর্শ)— এই নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গ্লোবাল টাইমসে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘একটি আকস্মিক এবং আচমকা পদক্ষেপে’ ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে মোদি ‘দেখাতে চেয়েছেন যে তিনি কালোটাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধটা সত্যিই তীব্র করে তুলতে চান।’
প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘মোদির উদ্দেশ্য ভাল এবং এই সিদ্ধান্ত ভারতের বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই নেওয়া হয়েছে, কারণ ভারতে অবৈধ কারবারগুলির সিংহ ভাগই নগদে হয় এবং ৫০০-১০০০ টাকার নোটেই ভারতে নগদ লেনদেনের ৮০ শতাংশ হয়।’’ কিন্তু দুর্নীতিতে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলেও প্রতিবেদনটিতে মত প্রকাশ করা হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্নীতি, কালোটাকা এবং কর ফাঁকির বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু সে সব পদক্ষেপের অধিকাংশই ‘নখদন্তহীন’ বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত নোট বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হলেও ‘সাহসী’। গ্লোবাল টাইমসের উত্তর সম্পাদকীয় প্রতিবেদনটির বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য নোট বাতিলের চেয়েও অনেক বেশি কিছু করা দরকার। কাঠামোয় সংস্কার আনাটাই সবচেয়ে জরুরি। এই বিষয়ে সঠিক দিশা পেতে নয়াদিল্লি বেজিং-এর পথ অনুসরণ করতে পারে।’’
নরেন্দ্র মোদি দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়তে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাকে যথেষ্ট বলে মনে না করলেও, এই পদক্ষেপ যে মহৎ উদ্দেশ্যেই গৃহীত হয়েছে, চীনের সরকারি সংবাদপত্রে তেমন মত প্রকাশিত হওয়া নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে দেশের বিরোধিতা সামলাতে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হতে হচ্ছে মোদিকে, জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের এককাট্টা সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়ে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে সেই আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষের সমর্থন পাওয়া অবহেলার বিষয় নয় বলে মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিডি প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-০৪