যুক্তরাষ্ট্র বনাম উত্তর কোরিয়া! যুদ্ধক্ষেত্রে নামার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এই দুই দেশ। পরিস্থিতি এমন যেন ‘যেকোনো সময়’ লেগে যাবে যুদ্ধ। আর এরই মধ্যে উত্তপ্ত আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রাশিয়ার অবস্থান নিয়ে। অর্থাৎ, রাশিয়া ওই দুই দেশের মধ্যে সমর্থন করবে কাকে?
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকার মধ্যে চলমান স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া একে অন্যর মিত্র। অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রর সম্পর্ক শুরু থেকেই খারাপ। সম্প্রতি তা আরও বেশি নাজুক অবস্থায় পৌঁছায় সিরিয়া ইস্যুতে। তবে এর শুরু ইউক্রেনের ক্রিমিয়াকে কেন্দ্র করে। সম্পর্ক খারাপের কথা স্বীকার করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, বর্তমানে ওয়াশিংটন ও মস্কোর সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। আর হয়েছে সিরিয়া ইস্যুতেই।
এছাড়া, ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় চীন ও রাশিয়ার মাঝখানে একটি বাফার রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া। নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেও দেশটিকে ঠিক রাখা প্রয়োজন বলে মনে করতে পারে রাশিয়া। ২০১৫ সালকে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া তাদের 'সম্পর্কের বছর' হিসেবে পালন করেছে। এমনকী, মস্কো সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কার উত্তর কোরিয়ার ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ মাফ করে দেয়। সব মিলিয়ে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কটা আগে থেকেই গভীর।
অন্যদিকে, গত বছর উত্তর কোরিয়া যখন ক্রমাগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছিলো তখন রাশিয়া বলেছিল, তাদের ক্রমাগত এমন সব হুমকি সবাইকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সেনাদের ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করবে। বিরোধীদের প্রতি এভাবে খোলাখুলি হুমকি দেওয়ার বিষয়টিকেও তারা খুবই নিষিদ্ধ বলে বিবেচনা করেন বলে জানান। তবে রাশিয়ার এমন বক্তব্যকে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ নয় বরং তাদের প্রতি সহযোগিতার শপথ হিসেবে মনে করেন অনেকে। সেই একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সেনা মহড়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভোলেনি রাশিয়া। সেটাকে নজিরবিহীন সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক চাপ হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
তবে শোনা যাচ্ছে, রাশিয়া নাকি তাদের মিসাইলগুলো উত্তর কোরিয়া সীমান্তের কাছে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভ্লাদিভস্তকে নিজেদের মিসাইল স্থাপন করছে রাশিয়া। যদিও এখনও এই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি রাশিয়া। ফলে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কেন সেগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিকে জাপানের গণমাধ্যমের দাবি, এরই মধ্যে চীন ও রাশিয়া কিছু গুপ্তচর জাহাজ পাঠিয়েছে আমেরিকার কার্ল ভিনসন নামের এয়ারক্রাফটবাহী যুদ্ধজাহাজকে অনুসরণ করতে। ধারণা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে চীন ও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া বুঝতে চাইছে।
এসব বিবেচনায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেহেতু সেই শীতল যুদ্ধের পর থেকেই খারাপ। তাই উত্তর কোরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের এমন যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মস্কো বর্তমানে নীবর থাকলেও শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নিলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।
