বিদায়ী সংবর্ধনায় ভাসলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। রবিবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবধর্না জানানো হয়। এদিন সন্ধ্যায় সেন্ট্রাল হলে প্রবেশের পরই বেজে ওঠে দেশটির জাতীয় সঙ্গীত। এরপর প্রথমে প্রণবকে মালা পরিয়ে সংবর্ধনা জানান দেশটির উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। এর পর তাঁর হাতে ফুলের স্তবক তুলে দেন লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন। পরে একটি স্মারক এবং সাংসদদের স্বাক্ষরিত একটি পুস্তিকা (কফি টেবিল বুক) তুলে দেওয়া হয় বিদায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে।
এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি, সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ড.মনমোহন সিং, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি.দেবগৌড়া, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, দলের নেতা গুলাম নবি আজাদ-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যরা।
বিদায়ী ভাষণের শুরুতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন প্রণব মুখার্জি। রাষ্ট্রপতি হিসাবে সংসদে শেষ ভাষণে সংসদে উপস্থিতকে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রণব বলেন ‘গত পাঁচ বছর ধরে সকলে যেভাবে তাঁকে সমর্থন করে গেছেন এবং আজ আমাকে উষ্ণ আতিথেয়তা জানানো হল তার জন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই’।
সাংসদ হিসাবে জীবনের প্রথম দিনটির কথা স্মরণ করে প্রণব মুখার্জি বলেন ‘সাংসদ হিসাবে আমি ৩৭ টি বছর উৎসর্গ করেছি। ৪৮ বছর আগে ৩৪ বছর বয়সে প্রথমবারের জন্য সাংসদ হই। আমি পাঁচবার রাজ্যসভা ও ২ বার লোকসভার সদস্য ছিলাম। রাজ্যসভায় চারবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হই এবং একবার গুজরাত থেকে’। তিনি আরও বলেন ‘সাংসদ হিসাবে আমার সময় খুব ভালো কেটেছে। সংসদে এসে আমি সমৃদ্ধ হয়েছি। অভিজ্ঞ সাংসদদের সংস্পর্শে এসেছি। সাংসদ হিসাবে আমি অনেক নেতার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসের নরসিমা রাও, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, বিজেপির সিনিয়র নেতা লালকৃষ্ণ আডবানীর নামও উল্লেখ করে তিনি বলেও এই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করেও অনেক কিছু শিখেছি’।
ভারতের সংসদকে গণতন্ত্রের মন্দির বলে আখ্যায়িত করে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘আমি যদি দাবি করি যে আমি এই সংসদেরই সৃষ্টি তবে সম্ভবত এটা অশোভন বলে বিবেচিত হবে না’। তবে সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন ইস্যুতে যেভাবে সংসদ ভন্ডুল হচ্ছে তা নিয়েও ক্ষোভ চেপে রাখেন তিনি। প্রণব বলেন ‘প্রথমে সংসদে গুরু-গম্ভীর আলোচনা হতো, রাজ্যসভায় খুব ভালো ভালো বক্তা ছিলেন। কিন্তু এখন বিরোধীদের বাধাদান ও বয়কটের ফলে সংসদ ভুন্ডুল হয়ে যাচ্ছে। এতে সংসদে আলোচনার সময় কমে যাচ্ছে’। রাষ্ট্র্রপতি হিসাবে সংবিধানকে রক্ষা করতে, সংরক্ষণ ও প্রতিরোধ করতে সর্বত চেষ্টা করেছেন বলেও এদিন জানান তিনি।
আগামীকাল ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি হিসাবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে প্রণব মুখার্জির। আগামী ২৫ জুন ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবেন রামনাথ কোবিন্দ। ওইদিনই রাইসিনা হিলস ছাড়বেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার