চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের সাহস থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার পেরাক রাজ্যের সুলতান নাজরিন শাহ। গতকাল মঙ্গলবার রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জন্য তহবিল গঠন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, "আমাদের প্রতিবেশিদের বিপর্যস্ত করার ভয় কিংবা হস্তক্ষেপের কারণে অভিযুক্ত হওয়ার ভয় কিংবা আমাদের আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভাবিত হওয়ার ভয়কে আমরা অনুমোদন করতে পারি না। মূলত এই ভয়ের কারণেই বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে যা ঘটছে তা নিয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারছি না।"
সুলতান নাজরিন বলেন, "জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত গণহত্যার প্রায় সকল মানদণ্ড রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত গণহত্যা সম্পর্কে বলা হয়, কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যাসহ জাতীয়, জাতিগত, গোত্রগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা, গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি গণত্যা বলে বিবেচিত হবে।"
তিনি আরও বলেন, "৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মায়ানমার সরকার বাস্তুচ্যুত করেছে; যা রাখাইন রাজ্যের ১.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষ অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্পে দুর্দশাগ্রস্ত জীবন যাপন করছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করার পর তাদেরকে নদী ও অগভীর গণকবরে নিক্ষেপ করা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত না হলেও কয়েক ডজন লোক খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে কিংবা নৌকায় করে অন্যত্র যাওয়ার সময় ডুবে মরছে।"
পেরাকের এই সুলতান বলেন, "আমরা কেবল আশা করতে পারি যে, অবিচার ও গণহত্যার শিকারদের কষ্ট দূর করতে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সম্পর্কে আমাদের সন্তানরা, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম শিখবে।’
তহবিল গঠনের জন্য উদ্যোক্ত সংগঠন ‘ইডেন গ্যালারি’ রোহিঙ্গাদের জন্য ২ মিলিয়ন মালয়শীয় রিংগিত সংগ্রহ করে। এই অর্থ রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্যের জন্য রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।"
উল্লেখ্য, লতিফ মহিদিন, দাতুক শরীফাহ ফাতেমা, সৈয়দ জুবীর, আহমাদ জাকি আনোয়ার এবং চ্যাং ফি মেনসহ বিখ্যাত স্থানীয় শিল্পীদের দান করা ১৫টি পেইন্টিং বিক্রির মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজা পারমিশুরি পেরাক তুইকু জারা সেলিম, এজ মিডিয়া গ্রুপের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান দাতুক টং কুই ওংগ এবং ইসিএম লিবারার চেয়ারম্যান দাতুকে সেরী কালিমুল্লাহ হাসান।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৫ অক্টোবর, ২০১৭/ তাফসীর