নির্ভয়া গণধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের মৃত্যুদন্ডের (ফাঁসি) সাজা বহাল রাখল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুকেশ সিং (২৯), পবন গুপ্তা (২২), বিনয় শর্মা (২৩) এবং অক্ষয় ঠাকুর (২৯)-এর মধ্যে প্রথম তিনজন তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করতে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ পিটিশন) আর্জি জানায়। কিন্তু সেই পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দেয় দেশটির শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি আর. ভানুমতী ও অশোক ভূষণের ডিভিশন বেঞ্চ।
নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল মোট ছয় জন। এর মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত বাস চালক রাম সিং শুনানি চলাকালীনই তিহার জেলে বন্দি অবস্থায় আত্মহত্যা করে। ষষ্ঠ অভিযুক্ত বিনয় কুমার দোষী সাব্যস্ত হলেও অপরাধের সময় নাবালক থাকায় তিন বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয় নাবালক বিচার পর্ষদ (জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড)। ২০১৫ সালের নভেম্বর জেল থেকে মুক্তি পায় বিনয় কুমার।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির চলন্ত বাসে ছয় দুর্বৃত্তর হাতে গণধর্ষণ ও পৈশাচিক অত্যাচারের শিকার হয় ২৩ বছরের প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী জ্যোতি সিং (যদিও প্রাথমিক অবস্থায় তার নাম গোপন রেখে ‘নির্ভয়া’ নামই ব্যাবহার করা হয় গণমাধ্যমগুলিতে)। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ দিনের লড়াইয়ের পর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে হার মানেন তিনি। ওই ঘটনার পর ভারত জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। গণধর্ষণ মামলার রায় যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সেজন্য দিল্লির সাকেত কোর্টে ‘ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট’ও গঠন করা হয়। এরপর এই মামলায় দিল্লির ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট দোষীদের অপরাধী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে। পরে হাইকোর্টও মৃত্যুদণ্ডের সেই আদেশ বহাল রাখে। কিন্তু হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় অভিযুক্তরা। গত বছর সুপ্রিম কোর্টও মৃতুদণ্ডের রায় বহাল রাখে। এরপরই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির কাছে রিভিও পিটিশন দাখিল করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুকেশ, পবন ও বিনয়। তাদের আর্জি ছিল ফাঁসির বদলে যেন যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু সোমবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এদিন ডিভিশন বেঞ্চ পরিষ্কার জানিয়ে দেয় রিভিউ জাজমেন্ট’এর কোন সুযোগ নেই। কারণ কোথাও ‘এরর অফ জাজমেন্ট’ অর্থাৎ গত বছরের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল সেখানে কোন ভুল ছিল না। শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে এই গণধর্ষণের ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে আখ্যায়িত করে বলে এই ঘটনা অত্যন্ত নৃশংস ও বর্বর ঘটনা। সেক্ষেত্রে নিজেদের শাস্তি কমানোর জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া ছাড়া এই চার দোষীর আর কোনো পথই খোলা থাকলো না।
শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্ভয়ার বাবা ও মা। তারা জানিয়েছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট ও ন্যায় বিচারের ওপর আমাদের ভরসা আছে’।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ জুলাই, ২০১৮/মাহবুব