‘ভারত সুরক্ষিত হাতে রয়েছে, দেশের মাথা কোন ভাবেই নিচু হতে দেব না।’
মঙ্গলবার ভোরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গিয়ে ভারতীয় সেনা বাহিনীর তরফে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়ার পর দুপুরেই মুখ খুললেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার অভিমত সবার উপরে দেশ।
এদিন দুপুরে রাজস্থানের চুরুতে একটি জনসভা থেকে মোদি জানান ‘আজ এক ঐতিহাসিক দিন। আজ ভারতের সাহসী বীরদের প্রতি মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানানোর দিন। আমি এই চুরুর মাটি থেকে আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই যে দেশ সুরক্ষিত হাতেই আছে। আমি ২০১৪ সালে বলেছিলাম আবার ২০১৯ সালে এই মাটিকে শপথ রেখে বলছি আমি দেশের গর্ব নষ্ট হতে দেব না। দেশকে থেমে যেতে দেব না। আমি দেশের মাথাকে নিচু হতে দেব না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন ‘২০১৪ সালে আপনাদের ভোটেই সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। আজ সমগ্র বিশ্ব এই দেশের ক্ষমতা বুঝে গেছে। যারা মনে করছে কেন্দ্রে দুর্বল সরকার রয়েছে-আপনাদের একটা ভোটই তাদের সেই চিন্তাভাবনাকে ভোঁতা করে দেবে এবং ফের শক্তিশালী বিজেপি সরকার গঠনে সাহায্য করবে।’
মোদির অভিমত তাদের কাছে ব্যক্তির থেকে দল বড় এবং দলের থেকে দেশ বড়। সেই কারণেই দেশের স্বার্থে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ১২ দিন পর মঙ্গলবার ভোরে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১২ টি ‘মিরাজ-২০০০’ যুদ্ধ বিমান। নিয়ন্ত্রণ রেখোর ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এই অভিযান চালায় আইএএফ।
বিমানবাহিনীর ওয়েস্টার্ন কমান্ডের নেতৃত্বে ভোর ৩.৩০ মিনিট থেকে ৪.০৪ মিনিট পর্যন্ত আধা ঘণ্টার অপারেশনে প্রায় ১ হাজার কিলোগ্রাম বোমা ফেলে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই অভিযানের পরিকল্পনা করেন এয়ার চিফ মার্সাল বি.এস.ধানুয়া। ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধানের নীল নকশাতেই খত হয় বহু জঙ্গি। যার মধ্যে অন্যতম পাক মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই-মহম্মদ’ প্রধান মাসুদ আজহারের দাদা ইব্রাহিম আজহার, ভাই মৌলানা তলহা সইফ, মাসুদের শ্যালক ইউসুফ আজহার এবং জয়শের কাশ্মীর মডিউলের দায়িত্বে থাকা জঙ্গি মুফতি আজহার খান কাশ্মীরি।
এদিকে বিমান বাহিনীর অভিযানের পর বিকালে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু ভবনে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ওই বৈঠকে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি সহ সরকারের প্রতিনিধিরা যেমন ছিলেন তেমনি কংগ্রেসের গুলাব নবি আজাদ, তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও ব্রায়েন, এনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল, সিপিআই নেতা ডি.রাজা সহ অন্য রাজনৈতিক দলের সাংসদরাও উপস্থিত ছিলেন এদিনের বৈঠকে। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে সুষমা স্বরাজ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিমান বাহিনীর অভিযানের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।
বৈঠক শেষে গুলাম নবি আজাদ বলেন ‘আমরা বাহিনীর প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাই। সন্ত্রাস দমনে তারা সবসময়ই আমাদের সমর্থন পাবে। এই অভিযানের আরেকটা ভাল দিক হল জঙ্গি ও তাদের ঘাঁটিগুলিকে নিখুঁত ভাবে টার্গেট করা হয়েছিল।’
এদিকে বিমানবাহিনীর সফল অভিযানের পরই দেশজুড়েই উৎসবে মেতে ওঠেন মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সকলেই বিমান বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে কোথাও আবির খেলায় মেতে ওঠেন কোথাও বা লাড্ডু বিতরণ করা হয়। সেনাবাহিনীকে স্যালুট জানিয়েছে বলিউড। অভিষেক বচ্চন থেকে শুরু করে অজয় দেবগন, পরেশ রাওয়াল, কৈলাশ খের, সোনাক্ষি সিনহা, অনুপম খের প্রত্যেকেই বিমান বাহিনীর উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন।
এদিকে আইএএফ’এর তরফে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গিয়ে অভিযানের পরই ভারতের গুজরাট ও পাঞ্জাব আন্তর্জাতিক সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই দুই রাজ্যের পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন