গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তান মদদপুষ্ট জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ সেনার মৃত্যুর ১২ দিনের মাথায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ভোরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাক শাসিত কাশ্মীরে গিয়ে জয়শ-ই-মহম্মদের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী (আইএএফ)। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা যায়, ওই হামলায় কমপক্ষে ৩৫০ জঙ্গির মৃত্যু হয়।
কিন্তু লোকসভার ভোটের মুখে বিমানবাহিনীর ওই এয়ারস্ট্রাইক নিয়েই ভারতের রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ চড়ছে। বিরোধীদের দাবি এয়ার স্ট্রাইকে ঠিক কতজন জঙ্গি মারা গেছে তার প্রমাণ দিক কেন্দ্রীয় সরকার। মোদি সরকারের তরফে পাল্টা বলা হয়েছে বিরোধীরা পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলে শত্রুপক্ষের হাতকেই শক্ত করছে।
হামলার পর বিরোধীদের মধ্যে সবার প্রথমে সরব হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। হামলায় কয়েক শতাধিক মানুষের মৃত্যুর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলটির প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই টিভিতে শুনলাম ৩০০ মানুষ মারা গেছে, ৩৫০ মানুষ মারা গেছে-আরও কত কি। আমরা জানতে চাই যে এয়ার স্ট্রাইকে কতজন মারা গেছেন? কারা মারা গেছেন? সত্য ঘটনা কি? বিস্তারিত তথ্য আমরা কেউ জানি না।’
বিজেপির বিরুদ্ধে সেনাদের রক্ত দিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলে মমতা বলেছিলেন,‘দেশের পক্ষে আমরা সবাই। কিন্তু সেনাদের রক্ত দিয়ে রাজনীতি করা আমরা ভালবাসি না। দেশের প্রয়োজনে যদি যুদ্ধ হয়, তবে আমরা দেশের সাথে আছি কিন্তু রাজনীতির প্রয়োজনে এবং আরেকটা নির্বাচনে জেতার জন্য আমরা যুদ্ধ চাই না।’
এরপর মমতার দেখানো পথেই হাঁটতে থাকেন তৃণমূলের সাংসদ কাকুলি ঘোষ দস্তিদার, মৌসম নুর বেনজির, ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেস নেতা দিগ্বি জয় সিং, সিপিআইএম নেত্রী বৃন্দা কারাত, সিপিআইএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম সহ বিরোধী দলের নেতারা। ভোটের মুখে বিরোধীরা এই ইস্যুকে নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ারও করতে পারে।
কংগ্রেস নেতা দিগ্বি জয় সিং প্রমাণ চেয়ে বলেন ‘ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেমন সমগ্র বিশ্বের কাছে তার প্রমাণ দিয়েছিল ঠিক সেরকম ভাবে এয়ার স্ট্রাইকের প্রমাণও আমাদের দিতে হবে।’
এদিকে, চুপ করে বসে নেই বিজেপি। এয়ার স্ট্রাইকের ক্ষয়ক্ষতি প্রশ্ন তোলায় প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকেই বিরোধীদের পাল্টা তোপ দেগে চলেছেন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা। রবিবার পাটনার সভা থেকে এই ইস্যুতে বিরোধীদের নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘দেশের সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদ দমনে নিরন্তর কাজ করে চলেছ। কিন্তু বিরোধীরা তাদের সেই বীরত্বেরই প্রমাণ চাইছে।’
গতকাল সোমবার কোয়েম্বাটুরে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বিমানবাহিনীর প্রধান বি.এস.ধানুয়া জানান ‘হতাহতের বিষয়টি স্পষ্টা করা বিমান বাহিনীর কাজ নয়। সেটা সরকার করবে। ঠিক কতজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আমরা তা গণনা করি না। আমরা কেবল বলতে পারি যে, আমরা আমাদের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করেছি কি না।’
বিমান বাহিনীর এই বক্তব্যে পরেও এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল। তবে দেশের মাটিতেই নয়, এয়ার স্ট্রাইকে হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিয়ে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশি গণমাধ্যমগুলিতেও যেভাবে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে মোদি সরকারের ভিতরে যথেষ্ট ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সুত্রের খবর, এই জল্পনার তথ্য প্রমাণসহ জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে মোদি সরকার। জানা গেছে, সরকারের কাছে এয়ার স্ট্রাইকের নির্দিষ্ট প্রমাণও রয়েছে। সময় মতো প্রমাণ সহ সেই ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সামনে আনা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর