দক্ষিণ ককেশাসের নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে তা দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। বিতর্কিত ওই এলাকা নিয়ে এখনো আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, এ সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষ্মণ নেই।
এরইমধ্যে সংঘর্ষ নাগার্নো-কারাবাখের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা চলছে।
নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিন্তু ১৯৯০’র দশক থেকে সেটি আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এজন্য দু'দেশ পরস্পরকে দায়ী করেছে।
এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুপক্ষের বেসামরিক নাগরিকসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন।
যুদ্ধে আর্মেনিয়া রাশিয়ার তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইসকান্দার ব্যবহার করার পর থেকে আজারবাইজান ইসরায়েলের তৈরি গাইডেড মিজাইল লোরা দিয়ে হামলা শুরু করেছে।
ইসরায়েল থেকে ক্রয় করা এ অস্ত্রে আর্মেনিয়াকে পর্যুদস্ত করছে আজারবাইজান। লোরার আঘাতে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে বলে দাবি আজারবাইজানের।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরায়েল থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে আর্মেনিয়া।
আজারবাইজানের অস্ত্র ভাণ্ডারে রয়েছে ইসরায়েল থেকে কেনা ব্যাপক অস্ত্র। এসব অস্ত্র আর্মেনিয়া ও আর্মেনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগোরনো-কারাবাখের বিরুদ্ধে হামলায় ব্যবহার করছে আজারবাইজান। এ নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে আর্মেনিয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের দেয়া তথ্য মতে, আজারবাইজানকে গত এক যুগে ব্যাপক অস্ত্র সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। এর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৮২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রয়েছে ড্রোন, ট্যাংক ধ্বংসকারী মিসাইল ও সারফেস টু সারফেস মিসাইল।
আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনা নাঘদালিয়ান বলেন, আজারবাইজানকে অস্ত্র দেয়ায় ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে আমাদের দেশ। ইসরায়েল যা করছে তা অগ্রহণযোগ্য। আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে ইসরাইল থেকে ফেরত নিয়ে এসেছি।
ইসরায়েলের অস্ত্র রফতানির বিষয়ে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আননা নাঘদালিয়ান বলেন, ইসরায়েলের কার্যপদ্ধতি অগ্রহণযোগ্য। তাই মন্ত্রণালয় ইসরাইলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে আনা হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দুঃখজনক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আর্মেনিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। আর্মেনিয়ার দূতাবাস আমাদের দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
তবে আজারবাইজানকে সরবরাহ করা অস্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এদিকে, আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আর্মেনিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার ঘটনা তাদের রাডার সিস্টেমে ধরা পড়েছে। আজ সকালের দিকে ওই হামলা হয় বলে দাবি করেছে আজারবাইজান। অন্যদিকে রাশিয়ার স্পুৎনিক বার্তা সংস্থা জানিয়েছে- কারাবাখের প্রধান শহর খানকেন্ডিতে বড় রকমের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ধারণা করা হচ্ছে- আজারবাইজান থেকে রকেট হামলা চালিয়ে এসব বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজারবাইজানকে বেসামরিক লোকজন হত্যার জন্য দায়ী করেছে। নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে বলে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুশান স্টেপানিয়ান জানিয়েছেন।
সূত্র: জেরুজালেম পোস্ট, আনাদোলু অ্যাজেন্সি ও পার্সটুডে
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ