দক্ষিণ ককেশাসের নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সম্প্রতি যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল তা দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে এবং এ সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষ্মণ নেই।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট এলহাম আলিয়েভ এক টুইটবার্তায় বলেছেন, আর্মেনিয়ার সেনারা নাগোর্নো কারাবাখ অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নিলেই কেবল ওই দেশটির সঙ্গে তারা সংলাপে বসতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি এ অঞ্চলের যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য ইউরোপকে দায়ী করে ইউরোপের নীতিকে শান্তি বিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট এলহাম দ্রুত যুদ্ধ অবসানে আর্মেনিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ইউরোপীয় সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা মিনস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিনস্ক বর্তমানে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের এই কড়া বক্তব্যের পর আর্মেনিয়ার সেনারা আজারবাইজানের রাজধানীর উপকণ্ঠে বেশ কয়েকটি উপশহরে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ওই এলাকার বাড়িঘর ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দু'পক্ষের গোলাবিনিময়ের মধ্যে পড়ে আজারবাইজানের অনেক বেসামরিক নাগরিকও আহত হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমন সময় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সেনাদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে যখন মিনস্ক গ্রুপসহ আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় বসার জন্য আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ইরানও বেসামরিক মানুষ হতাহত ঠেকানোর জন্য যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আজ এক বিবৃতিতে বিতর্কিত এলাকা নিয়ে সংকট সমাধানে সহায়তার জন্য তেহরানের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বলেছেন, আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সেখান থেকে আর্মেনিয় সেনা প্রত্যাহার এবং আলোচনার আহ্বান জানিয়ে ইরান প্রস্তাব তুলে ধরেছে যাতে যতদ্রুত সম্ভব যুদ্ধের অবসান ঘটে।
ইরানের মতো এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও যেমন কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরঘিজিস্তান এমনকি তুর্কমেনিস্তানও যুদ্ধ বন্ধের জন্য দুদেশের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছে। আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামরিক উপায়ে এ সংকটের সমাধান হবে না বরং রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান বেহেশতিপুর বলেছেন, যুদ্ধরত দুই দেশই ইরানের প্রতিবেশী। তাই একমাত্র সংঘাত অবসান ও সমঝোতা হলে ইরানের স্বার্থও রক্ষিত হবে।
মোটকথা বলা যায়, যুদ্ধ ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে এবং সামরিক উপায়ে এ সংকটের সমাধান হবে না বরং দ্বিপক্ষীয় কিংবা বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে যেভাবেই হোক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে নিঃসন্দেহে সংঘাত চলতে থাকলে বিদেশিরা এ অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি ও হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে যার পরিণতিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আরো বেশী বিবাদ তৈরি হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত