প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী হিংসাত্মক পদক্ষেপের খেসারত দিতে হবে আমেরিকাকে। যাদের রক্ত-ঘামে যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে, সেই অভিবাসী সমাজকে প্রতিনিয়ত হেয়-প্রতিপন্ন করার জের টানতেই হবে বড় ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। এমন শংকা ব্যক্ত করেছে বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদক-পরিষদ।
বিশেষ এক সম্পাদকীয়তে টাইমস লিখেছে, কল্পনারও অতীত হিংস্রতা প্রদর্শন করা হচ্ছে অভিবাসীদের প্রতি। গুরুতর অপরাধ দমনের নামে অসহায় অভিবাসীদের পাকড়াও করে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনায় গোটা কমিউনিটি স্তম্ভিত। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে আর কখনোই অভিবাসী সমাজকে পড়তে হয়নি। ট্রাম্পের প্রায় চার বছরের আমলে বিদেশী কর্মী এবং দক্ষতাসম্পন্ন লোকজনের আগমন ঠেকানো হয়েছে। যা আগের দশকের তুলনায় উদ্বেগজনক।
অর্থাৎ মেধাবি লোকজনের সংকট সৃষ্টির গভীর এক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অথচ তার নিজের অনেক প্রতিষ্ঠানেই অভিবাসীরা শ্রম দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন ন্যায্য পারিশ্রমিক না পেয়েও। এমন কর্মকাণ্ডে ট্রাম্পের অন্ধ সমর্থক তথা বিবেকহীন রিপাবলিকানরা খুশি হলেও বোধসম্পন্ন আমেরিকানরা অখুশি। নিকট ভবিষ্যতে অর্থাৎ ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউজে থাকবেন না-তখন কৃষি খামার, শিল্পকারখানা এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরে এর কুপ্রভাব দৃশ্যমান হবে। কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে, নতুন কোম্পানী আসবে না। অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি দুর্বল হয়ে পড়বে।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করছেন যে, দক্ষতাসম্পন্ন লোকজনের যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ ক্রমান্বয়ে সীমিত করায় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরে ইতিমধ্যেই নাজুক অবস্থার প্রকাশ ঘটেছে। শ্রম দফতর এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে সক্ষম হলেও ট্রাম্পের কঠোর মনোভাবে তারা মুখ খুলছেন না।
ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট রবার্ট আটকিনসন বলেছেন, সিলিকন ভ্যালিতে কানাডায় তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে লোক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। বড়বড় বিলবোর্ডে ‘আবশ্যক’ লেখা বিজ্ঞপ্তি অনেকের দৃষ্টি কাড়ছে। অর্থাৎ আমেরিকান কোম্পানীর চাকরি হারানো বিদেশী দক্ষ কর্মচারিরা ছুটছেন কানাডায়।
যুক্তরাষ্ট্র শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পাট্রিক পিজ্বেলা বলেছেন, কম বেতনের বিদেশী শ্রমিকের আগমন অব্যাহত রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই। এজন্যে ঢেলে সাজাতে হবে বর্তমান রীতি। অথচ পারিবারিক কোটা ছাড়াও স্বল্প সময়ের জন্যে বিদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক আনার বিরুদ্ধেও নানা নিষেধাজ্ঞা (অস্থায়ী) জারি করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের আগে কেউই আসতে পারবে না। করোনা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়বে বলে অনেকের ধারণা।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন মর্যাদায় আগমনের সংখ্যা বেড়েছিল ১০ লাখ ৫ হাজার। তা কমেছে ২০১৯ সালে। অভিবাসন মর্যাদায় এসেছেন মাত্র ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪৮ জন। করোনার কারণে চলতি বছরে সে সংখ্যা অনেক কমেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন