মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইরান-আল কায়েদা যোগসূত্র আলোকে বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশে আল কায়েদা সেলের সন্ত্রাসী হামলার কথা বলেছেন। তবে সে হামলার বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি তিনি। এরইমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় মাইক পম্পেওর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ওই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। পম্পেওর বক্তব্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে সমগ্র প্রবাসে।
ডেমক্র্যাটিক পার্টির তৃণমূলের সংগঠক এবং আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান এম এ সালাম পম্পেওর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। কারণ, সন্ত্রাস নির্মূল ও দমনে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ়চেতা মনোভাব প্রশংসিত হয়েছে। শুধু অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনেই নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্মগত একজন নাগরিক হিসেবে আমি পম্পেওর অসত্য ও নির্জলা এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ওয়াশিংটন মেট্র এলাকার একটি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির শিক্ষক ড. ফাইজুল ইসলাম বলেন, পম্পেও এমন কিছু কথা বলেন যার কোন ভিত্তি থাকে না। তার বক্তব্য/মন্তব্য সম্পর্কে জানতে গুগল করলে দেখা যাযে, যতগুলো ইন্টারভিউ তিনি দিয়েছেন প্রায় সবকটি ভুলে ভরা অথবা মিথ্যা তথ্যে পরিপূর্ণ ছিল।। এজন্যে পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধনী দেয়া হয়। এমনকি কখনো কখনো গণমাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয় সেগুলো না প্রকাশের। পম্পেও বাংলাদেশ সম্পর্কেও উদ্ভট একটি মন্তব্য করেছেন।
ফোবানার নির্বাহী চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী পম্পেওর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, গণধিকৃত হিসেবে বিদায়ের প্রাক্কালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতই তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও উদ্ভট-অবান্তর প্রসঙ্গের অবতারণা করে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের সাথে বিদ্যমান মধুর সম্পর্কে চিড় ধরানোর জঘন্য একটি অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়া বলেছেন, ট্রাম্পের চেয়েও কয়েকধাপ এগিয়ে পম্পেও মিথ্যাচার করেছেন। ডুবন্ত জাহাজের প্রধান ক্যাপ্টেনই যেখানে প্রতিনিয়ত পাগলের প্রলাপ করছেন, সেখানে তার মন্ত্রী পম্পেওর কাছে এমন উদ্ভট বক্তব্য ছাড়া কিইবা আশা করতে পারি। ঘৃণাভরে পম্পেও’র মিথ্যাচারের নিন্দা জানাচ্ছি।
ফ্লোরিডার ৫১ দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিগণের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স’র ভাইস প্রেসিডেন্ট আতিকুর রহমান বলেছেন, পম্পেও যা বলেছেন তা কোনভাবেই ন্যায়-নিষ্ঠ বলে বিবেচনা করা যাচ্ছে না।
নিউ অর্লিন্সের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ এবং এমিরিটাস অধ্যাপক ড. মোস্তফা সারোয়ার বলেন, বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অঘোষিত একটি ঐক্য রয়েছে যে, তারা কেউই সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নন। দেশের প্রায় সকল মানুষই একই চিন্তা-চেতনায় উজ্জীবিত রয়েছেন। আমি পম্পেওর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নিউজার্সির মনমাউথ ইউনিভার্সিটির এসোসিয়েট ডিন অধ্যাপক ড. গোলাম মাতবর বলেছেন, আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে পম্পেওর সম্যক কোনো ধারণাই নেই। তাকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা দরকার।
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি সুব্রত তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে আল-কায়েদা অথবা কোন ধরনের জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। অভিশংসিত প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা