২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া।
ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ তথা অস্ত্র নিরপেক্ষ মর্যাদা ধারণ, পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাস (লুহানস্ক ও ডোনেটস্ক) অঞ্চলকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা এই অভিযানে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়া। তবে নিজেদের সাধ্যমতো প্রতিরোধও গড়ে তুলছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী কিয়েভের আশপাশ থেকে পিছু হঁটতে বাধ্য হয় রাশিয়া সৈন্যরা।
সেখান থেকে সরে গিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক ও ডোনেটস্ক অঞ্চলকেই অভিযানের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
পূর্ব ইউক্রেনের এই পুরোনো শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ অঞ্চলটিকে বলা হয় ডোনবাস- যা ‘ডোনেট বেসিন’ বা ডোনেট নদীর অববাহিকার সংক্ষিপ্ত রূপ।
এখানে যুদ্ধের ফল কী হয়- তার ওপরই নির্ভর করছে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের ভাগ্য।
দৃশ্যতঃ এই অভিযানে রাশিয়া অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্য পায়নি। তাই প্রশ্ন হচ্ছে ইউক্রেনে, এই বিশেষ অভিযানের সাফল্য দাবি করতে হলে তার কী কী অর্জন করতে হবে?
রাশিয়া এখন দক্ষিণ ইউক্রেনের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার দেশের প্রতি মিটার জায়গার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন ডোনবাস নিয়ে কথা বলেন- তখন তিনি বোঝান ইউক্রেনের পুরনো ইস্পাত ও কয়লা উৎপাদনকারী এলাকাটিকে, যার অর্থ সমগ্র ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক মিলিয়ে একটি বড় অঞ্চল।
প্রধানত রুশ-ভাষাভাষী এই এলাকাটিকে ‘মুক্ত করার’ কথা বারবার বলে আসছেন পুতিন।
রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে নিজের অংশ করে নেয়ার পর থেকে পুতিনের প্রক্সি বাহিনী এই ডোনবাসের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা দখল করে নেয়।
যুদ্ধ শুরুর এক মাসের মধ্যেই রাশিয়া লুহানস্কের ৯৩ শতাংশ এবং ডোনেটস্কের ৫৪ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
তবে পুরো ডোনবাসকে পদানত করা থেকে রুশ বাহিনী এখনও বহু দূরে।
এক্ষেত্রে পুতিনের রণকৌশল কী?
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী মনে করে, পুতিন শুধু যে ডোনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চান তা নয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন, ক্রিমিয়ার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল এবং জাপোরিঝঝিয়ার কিছু অংশও নিয়ে নিতে চান তিনি।
এর ফলে তিনি রাশিয়ার দক্ষিণ উপকুল বরাবর একটি ভূ-সংযোগ তৈরি করতে পারবেন। যাতে তিনি ক্রিমিয়ার পানির সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
খেরসনে রাশিয়া এর মধ্যেই তার নিজের মুদ্রা রুবল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এখানেও হয়তো তিনি একটি প্রক্সি-প্রজাতন্ত্র সৃষ্টির জন্য একটি গণভোট করারও চেষ্টা করতে পারেন।
রুস্তর মিনেকায়েভ নামের একজন রুশ জেনারেল এমনটাও বলেছেন- তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ওডেসা ছাড়িয়ে কৃষ্ণসাগর উপকুল পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
তবে এখন পর্যন্ত এটা শুধু উচ্চাভিলাষের বেশি কিছু বলে মনে হচ্ছে না।
তবে ডোনেটস্কের অধিকাংশ এবং লুহানস্কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এখনও ইউক্রেনের হাতেই রয়েছে।
এ কারণে রাশিয়া চাইছে ইউক্রেনের বাহিনীকে ঘিরে ফেলতে।
কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ট্রেসি জার্মান বলছেন, “এটি একটি অনেক বড় এলাকা এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ভৌগলিক জটিলতাগুলো উপেক্ষা করার মত নয়।”
রুশ সীমান্তের দক্ষিণের খারকিভ শহরটি ইউক্রেনের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে- তবে রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইজিয়াম শহরটি।
এটি হচ্ছে একটি প্রধান মোটরওয়ে সংলগ্ন এলাকা যা দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলে যাওয়া যায়।
“আপনি যদি ইজিয়ামের আশপাশে রুশ বাহিনী কি করছে তার দিকে নজর দেন- তাহলে দেখবেন তারা প্রধান হাইওয়েগুলো ধরে ধরে এগুচ্ছে। এর কারণ হলো, তাদের যুদ্ধসরঞ্জামের বেশিরভাগই তারা নিয়ে যাচ্ছে সড়ক ও রেলপথ দিয়ে,” বলেন অধ্যাপক জার্মান।
এখন যেসব শহরগুলোর দিকে রাশিয়া নজর দিচ্ছে এগুলোর বাসিন্দাদের ইতোমধ্যেই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।
তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে স্লোভিয়ানস্ক। এমওথ্রি রাস্তা দিয়ে এই শহরটিতে যেতে হয় এবং এর লোকসংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার। ২০১৪ সালে এটি রুশ-সমর্থিত বাহিনী দখল করে নিলেও পরে তা আবার হাতছাড়া হয়। তাদের আরও একটি বড় লক্ষ্য হচ্ছে ক্রামাটরস্ক দখল করা। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/কালাম