আলিনা কাবায়েভা রাশিয়ার একজন রাজনীতিক, মিডিয়া বস এবং অলিম্পিকে সোনা জয়ী জিমন্যাস্টস। গুঞ্জন রয়েছে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথিত প্রেমিকা এবং তাদের সন্তান আছে। বাকি পরিচয় ছাপিয়ে এই কারণে এখন তিনি আলোচিত হচ্ছেন এবং তার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে শোনা যাচ্ছে।
বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে পুতিনের কথিত প্রেমিকা আলিনা কাবায়েভা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছে। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশের অবরোধের আওতায় যাদেরকে আনা হয়েছে, তাদেরকে মূলত পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। যাদের মধ্যে আছেন অলিগার্ক, রাজনীতিবিদ এবং সেইসব কর্মকর্তা যারা প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নানা সুবিধা ভোগ করেছেন।
গত মাসে আমেরিকা ও ব্রিটেন ভ্লাদিমির পুতিনের দুই কন্যার উপর অবরোধ আরোপ করে। এদের একজন বছর বয়সী মারিয়া ভরোন্তসোভা, অপরজন বছর বয়সী কাতেরিনা তিখোনোভা। এই দুজনের মা পুতিনের সাবেক স্ত্রী লুদমিলা। গত মার্চ মাসে একটি অনলাইন পিটিশনে দাবি তোলা হয় মিজ কাবায়েভাকে যেন তার সুইজারল্যান্ডের নিবাস থেকে বহিষ্কার করা হয়।
কিছু সূত্রের মাধ্যমে বিবিসি নিশ্চিত হতে পেরেছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞার নতুন যে তালিকা তৈরি করছে তাতে কাবায়েভার নাম আছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবর, তাকে লক্ষ্যে পরিণত করার কারণ ক্রেমলিনের প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখা এবং ৬৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট পুতিনের 'ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে' থাকার অভিযোগ।
যদিও খসড়া তালিকায় কাবায়েভকে পুতিনের সঙ্গী হিসেবে উল্লেখ করেনি। তালিকাটিতে আনুষ্ঠানিক সাক্ষরও করা হয়নি এখন পর্যন্ত। যদিও কাবায়েভের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে মস্কোভস্কি করেসপন্ডেন্ট পত্রিকা খবর দেয়, ভ্লাদিমির পুতিন তার স্ত্রী লুদমিলাকে ডিভোর্স দিয়ে মিজ কাবায়েভাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছেন।
দুজনেই এই খবরের সত্যতা উড়িয়ে দেন। এর কিছুদিন পরই কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। তারও পাঁচ বছর পুতিন ও লুদমিলা তাদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। রাশিয়া ২০০০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত অলিম্পিক্সে জিমনাস্টিক্সের যত রকম ইভেন্ট আছে তার সবকটিতে স্বর্ণ জিতেছে আলিনা কাবায়েভা। তার জন্ম ১৯৮৩ সালে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি রিদমিক জিমনাস্টিক্স শুরু করেন।
তার কোচ ইরিনা ভিনার বলেন, 'আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারতাম না। রিদমিক জিমনাস্টিক্সের জন্য যে দুটি গুন দরকার-নমনীয়তা ও ক্ষিপ্রতা- দুটিরই এক বিরল সমন্বয় ছিল তার মধ্যে।' এক পর্যায়ে কাবায়েভা 'রাশিয়ার সবচাইতে নমনীয় নারী' হিসেবে পরিচিতি পান। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। সবার মধ্যে বিস্ময় জাগিয়ে উনিশশো আটানব্বই সালে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন তিনি।
দুই হাজার সালের সিডনি অলিম্পিক্সে একটি ভুলের কারণে ব্রোঞ্জ নিয়ে ফিরতে হয় তাকে, কিন্তু চার বছর পর এথেন্স অলিম্পিক্স থেকে স্বর্ণ নিয়ে ফেরেন। অবসরে যাওয়ার আগে অলিম্পিক্স পদক ছাড়াও তিনি আঠারোটি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ পদক ও পঁচিশটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ পদক জেতেন।
অন্যান্য রুশ অ্যাথলিটদের মত মাদকের কালো থাবা থেকে আলিনা কাবায়েভাও রক্ষা পাননি। দুই হাজার এক সালের একটি প্রতিযোগিতায় তার শরীরে নিষিদ্ধ মাদকের উপস্থিতি পাওয়ার পর তার পদক কেড়ে নেয়া হয়। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সরকারি দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির হয়ে ২০০৭-২০১৪ মেয়াদে আসন গ্রহণের মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
তিনি ২০১৪ সালে ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের প্রধান হন। এই প্রতিষ্ঠানটির হাতে রাশিয়ার প্রায় সবগুলো প্রধান রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোর বেশিরভাগ মালিকানা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে এই গণমাধ্যমগুলোই নিরলসভাবে ক্রেমলিনপন্থী বার্তা প্রচার করে যাচ্ছে, যাতে অভিযোগ করা হচ্ছে ইউক্রেনিয়ানরা নিজেরাই নিজেদের শহরে গোলাবর্ষণ করছে। এসব বার্তায় রুশ সৈন্যদের বর্ণনা করা হচ্ছে মুক্তিদাতা হিসেবে।
তবে এটা স্পষ্ট নয় পুতিনের সাথে তার প্রথম পরিচয় কখন হয়েছিল। কিন্তু একজন শীর্ষস্থানীয় অলিম্পিয়ানের পক্ষে একটি দেশের প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তাদের দু’জনের ২০০১ সালে তোলা একটি ছবি পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে পুতিন তার হাতে শীর্ষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ তুলে দিচ্ছেন।
গুজব আছে তাদের দুজনের সন্তান রয়েছে। তবে সন্তানের সংখ্যা এক এক খবরে এক এক রকম উল্লেখ রয়েছে। একটি সুইস পত্রিকার খবর অনুযায়ী মিজ কাভায়েভা ২০১৫ সালে লেক লুগানোর একটি বিশেষ ক্লিনিকে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। একই স্থানে ২০১৯ সালে তার আরেকটি ছেলে হয়।
কিন্তু দ্য সানডে টাইমস এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর মোতাবেক মস্কোতে ২০১৯ সালে যমজ ছেলে জন্ম দেন মিজ কাভায়েভা। ক্রেমলিন এসব খবর অস্বীকার করে। ২০১৫ সালে পুতিনের মুখপাত্র বলেছিলেন, 'ভ্লাদিমির পুতিনের ঔরসে সন্তান জন্মদানের খবরের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।'
ভোগ পত্রিকায় ২০১১ সালে তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয়, সেখানে তিনি ফরাসি ফ্যাশন হাউজ বালমেইনের তৈরি একটি বহুমূল্য স্বর্ণখচিত পোশাক পরেন। তিনি ২০১৪ সালে সোচির শীতকালীন অলিম্পিক্সের একজন মশালবাহকও ছিলেন। সম্প্রতি গত এপ্রিলে তিনি মস্কোতে জুনিয়র জিমনাস্টিক্সের একটি উৎসবে যোগ দেন।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর, যুক্তরাষ্ট্র মিজ কাবায়েভার উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে অনিচ্ছুক, তাদের আশঙ্কা এটা পুতিনের প্রতি 'ব্যক্তিগত আক্রমণ' হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যার ফলে উত্তেজনা আরো বেড়ে যেতে পারে। যদিও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা একেবারে নাকচ হয়নি। গত এপ্রিলে যখন হোয়াইট হাউজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন আলিনা কাবায়েভা তাদের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই, প্রেস সেক্রেটারি জবাব দিয়েছিলেন, কেউই নিরাপদ নয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক