এই সেই নদী যাকে বলা হতো বাইবেলের স্বর্গেন উদ্যান ইডেনের জলদাতা এবং যার কোলেই জন্ম নিয়েছে মনুষ্য সভ্যতা।
মানুষের নেতিবাচক কাজ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একসময়কার সেই প্রমত্তা দজলা এখন জীবন সায়াহ্নে, প্রতিদিনই কমছে জল।
ফোরাত আর দজলার তীরেই হাজার বছর আগে হয়েছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সূত্রপাত।
তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরাক কিন্তু খরা আর মরুকরণে দেশটি পদে পদে দারিদ্র্যের কষাঘাত। একের পর এক আসছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকাতেও ইরাক আছে।
এপ্রিল থেকেই ইরাকের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়াতে থাকে এবং কমলা রঙের আকাশ ধেয়ে আসে তীব্র বালুঝড় নিয়ে। তখন পুরো দেশ ধুলোয় ভরে যায়। ভর গ্রীষ্মে সেই তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত যায়।
ইরাকের মসুল, বাগদাদ ও বসরা শহরের সাথে দজলা নদীর সম্পর্ক গভীর। তবে তুরস্কের উজানে বাঁধের কারণে টাইগ্রিস বা দজলার এখন দম বন্ধ হওয়ার দশা।
ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দজলার করুণ চিত্র।
প্রতিনিয়ত কমছে পানি
দজলার যাত্রা শুরু সিরিয়া ও তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চল ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত এলাকা কুর্দিস্তান দিয়ে। যেখানে মানুষ ভেড়া পালে ও আলু ফলায়।
ফায়াশ খাবুর এলাকার বাসিন্দা পিবো হাসান দোলমাসা বলেন, ‘আমাদের জীবন দজলা নির্ভর।’ ‘আমাদের সব কাজ, কৃষি এর ওপর নির্ভরশীল।’
তিনি জানালেন গেল তিন বছর ধরে এই নদীর জল কেবল কমছে। আর এই পানি কমার জন্য তুরস্ককে দায়ী করছে ইরাক সরকার ও কুর্দিস্তানের কৃষকরা। যেখানে দজলায় বাঁধ দিয়ে নাটকীয়ভাবে ইরাকে পানি প্রবাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইরাক সরকারের হিসেব মতে, গেল শতকে দজলার পানি প্রবাহ ৩৫ শতাংশ কমেছে। বাগদাদ নিয়মিতভাবেই তুরস্কের কাছে আরও পানি চায়। তবে তুরস্ক সে কথায় কান না দিয়ে যে পানি পাওয়া যায় তার কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
দজলার এই শুকিয়ে যাওয়ায় বাগদাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইরাকি শহরগুলোতেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। কৃষি কাজ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমন বাড়ছে বালুঝড়ের মতো নানা বিপর্যয়, শুকিয়ে যাচ্ছে গাছপালা।
সূত্র: ফ্রেঞ্চ টোয়েন্টি ফোর
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল