গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। নৃশংস হামলায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে ৯ হাজার ৬১ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
বর্তমানে মুহুর্মুহু বোমা হামলার পাশপাশি গাজায় স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরই মধ্যে ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী গাজা উপত্যকার প্রধান নগরী গাজা সিটি ঘিরে ফেলেছে দাবি করেছে।
এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করেছে লেবাননের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও। এরই মধ্যেই ইসরায়েলও লেবাননে হামলা চালিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হিজবুল্লাহকে সহায়তা করার অংশ হিসেবে সিরিয়ায় মোতায়েনরত ইরান-সমর্থিত একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সদস্যদের দক্ষিণ লেবাননে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বৃহস্পতিবার আইডিএফের আরবি ভাষার মুখপাত্র অভিচয় আদরাই এই দাবি জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর জুলফিকার নামে পরিচিত একজন কমান্ডারের নেতৃত্বে ইরানের ইমাম হুসাইন ব্রিগেড দক্ষিণ লেবাননে পৌঁছেছে।
“ইরানের এই মিলিশিয়া গোষ্ঠী সম্প্রতি লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে আইডিএফের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে,” বলেছেন অভিচয় আদরাই।
তিনি বলেন, “হিজবুল্লাহ এবং ইমাম হুসাইন ব্রিগেডের জন্য লেবাননকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ইসরায়েলের উত্তরে সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করলে তার জবাব দেওয়ার জন্য আইডিএফ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।’’
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন আলমা রিসার্চ সেন্টার বলছে, ইমাম হুসাইন ব্রিগেড ইরানের একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী। ইরাকি শিয়াদের সমন্বয়ে গঠিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী সিরিয়ার সেনাবাহিনীর চতুর্থ ডিভিশনে নিয়মিত সৈন্য হিসেবে কাজ করছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রধানত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে নিয়োজিত রয়েছে।
সিরিয়ায় ইসরায়েল ও মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণাত্মক অভিযান পরিচালনার রেকর্ড রয়েছে ইমাম হুসাইন ব্রিগেডের। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের ভাই মাহের আসাদের নেতৃত্বে পুরো চতুর্থ ডিভিশনটি ইরানের প্রক্সি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ইমাম হুসাইন ব্রিগেড সরাসরি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সকে রিপোর্ট করে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের আলমা রিসার্চ সেন্টার।
গাজা উপত্যকায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের মাঝে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের শুরু থেকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের এই সশস্ত্রগোষ্ঠী। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর সীমান্ত সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪৯ জন যোদ্ধা নিহত ও আরও ৪৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হিজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলছে, গাজায় অবিলম্বে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং স্থল হামলা বাতিল না করা হলে ইসরায়েলে নজিরবিহীন আক্রমণ চালাবে তারা।
তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইরানি কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য জানা যায়নি। এমনকি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোও নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি। সূত্র: নিউজ উইক, টাইমস অব ইসরায়েল
বিডি প্রতিদিন/আজাদ