আজ ৫ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। গোটা বিশ্বের মানুষ তাকিয়ে আছে এই নির্বাচনের দিকে। কে হতে যাচ্ছেন বিশ্ব পরাশক্তি দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। রাজনীতি বিশ্লেষকেরাও তাদের মতামত দিচ্ছেন।
এদিকে, মার্কিন নির্বাচনসংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া শীর্ষস্থানীয় দুই ব্যক্তি তো রীতিমতো বিরোধেই জড়িয়ে গেছেন। তারা হলেন অ্যালান লিচম্যান ও নেট সিলভার। অ্যালান লিচম্যান হলেন- মার্কিন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নেট সিলভার হলেন- পরিসংখ্যানবিদ ও জরিপ বিশেষজ্ঞ।
অ্যালান লিচম্যান অতীতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনগুলোতে ১০টি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যার মধ্যে ৯টিই যথাযথভাবে দিতে পেরেছিলেন।
এবারের নির্বাচন সামনে রেখে তিনি মতামত দিয়ে বলেছেন, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসই জয়ী হতে যাচ্ছেন।
তবে পরিসংখ্যানবিদ ও জরিপ বিশেষজ্ঞ নেট সিলভার তা মনে করেন না। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে তিনি লিখেছেন, এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হাড্ডাহাড্ডি হচ্ছে। তার মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই জিতবেন এবারের নির্বাচনে।
তারা দু’জন নিজ নিজ পদ্ধতির যৌক্তিকতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন।
গত সেপ্টেম্বরে নেট সিলভার প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাস দিতে লিচম্যান যে ১৩টি মাপকাঠি অনুসরণ করেছেন, সেগুলো তিনি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেছেন কিনা। তার দাবি, অধ্যাপক অ্যালান লিচম্যানের পদ্ধতি আদতে ট্রাম্পের পক্ষে যাচ্ছে।
অর্থনীতিতে পড়াশোনা করা নেট সিলভারকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন অ্যালান লিচম্যান। তার যুক্তি হলো, সিলভার তো ইতিহাসবিদ কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নন। সিলভার অতীতে ভুল আভাস দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
তাহলে কার ভবিষ্যদ্বাণী সবচেয়ে যথার্থ?
নির্বাচনসংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়ার ক্ষেত্রে লিচম্যান পরিসংখ্যান বা জরিপের তথ্যের ওপর ভিত্তি করেন না; বরং তিনি কিছু সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের ভিত্তিতে পূর্বাভাস দেন। তিন দশকের বেশি সময় আগে রুশ ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও গণিতবিদ ভ্লাদিমির কেইলিস বোরকের সহায়তায় তিনি এমন পদ্ধতি শিখেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ১৩টি মাপকাঠি বিবেচনায় নিয়ে থাকেন।
২০২৪ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে অ্যালান লিচম্যান বলেছেন, তার মাপকাঠির আটটিই কমলা হ্যারিসের পক্ষে যাচ্ছে।
নির্বাচন পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য নেট সিলভার অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন।
জাতীয় ও অঙ্গরাজ্যভিত্তিক পরিচালিত জরিপ, অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত, সম্ভাব্য ভোটার উপস্থিতি এবং আরও কিছু বিষয়ের ভিত্তিতে তিনি সম্ভাব্য পরিসংখ্যান মডেল তৈরি করেন। যেসব জরিপ করা হয়, সেগুলোতে কোনও অসংগতি থাকলে সেগুলোও ঠিকঠাক করা হয়। যেসব জরিপ অপেক্ষাকৃত নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়, সেগুলোকে বিবেচনায় নেন সিলভার।
১৯৮৪ সালের পর থেকে সাম্প্রতিক ১০টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৯টি নিয়েই যথাযথ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন অ্যালান লিচম্যান। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ভুল পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে আল গোরকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জর্জ ডব্লিউ বুশ।
২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৯টির পূর্বাভাস যথাযথভাবে দিয়েছিলেন নেট সিলভার। তিনি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে অবশ্য নেট সিলভার হিলারি ক্লিনটনের জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্বাচন জিতে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্র: ইউএসএ টুডে
বিডি প্রতিদিন/একেএ
