আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এবারের কপ-২৯ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘের এ জলবায়ু সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তিনশ বিলিয়ন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে ধনী দেশগুলো। জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও প্রতিরোধে সহায়তার জন্য এ সহায়তা দেয়া হবে। যদিও আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত এই কপ-২৯ সম্মেলন সমঝোতার জন্য অতিরিক্ত তেত্রিশ ঘণ্টা সময় লেগেছে। শেষে লম্বা আলোচনার পর দেশগুলো এ বিষয়ে একমত হয়েছে।
আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ-২৯'র শেষদিন ছিল গত শুক্রবার। শেষদিনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু সংকট নিরসনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ২৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব রাখে।
সম্মেলনে থাকা ছোট অর্থনীতির দেশগুলো সঙ্গে সঙ্গেই এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেন। জলবায়ু সংকট নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এই অঙ্ককে 'তামাশা', 'লজ্জাজনক', 'আপত্তিকর' বলে মন্তব্য করে।
পানামার প্রতিনিধি হুয়ান কার্লোস মন্টেরি গোমেজ গার্ডিয়ানকে বলেন, 'এটা কোনোভাবেই যথেষ্ট না। আমাদের বছরে অন্তত পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমরা চেয়েছি এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক জিডিপির মাত্র এক শতাংশ।'
উন্নয়নশীল ও স্বল্প উন্নত দেশগুলোর সমালোচনার মুখে সাহায্যের পরিমাণ নিয়ে আজ শনিবারও আলোচনায় বসা হয়। সেখানে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিতে সম্মত হয় বড় অর্থনীতির দেশগুলো।
জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টেইল বলেছেন ‘এটা ছিল কঠিন যাত্রা কিন্তু আমরা চুক্তিটি করতে পেরেছি’। যদিও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য দেশসমূহের প্রতি যে আহবান গত বছর করা হয়েছিলো সে বিষয়ে কোন চুক্তি এবারের সম্মেলনে করা যায়নি। শনিবার উন্নয়ন দেশগুলো, বিশেষত জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো নাটকীয়ভাবে আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। ছোট ছোট দ্বীপ রাজ্যগুলোর যে জোট তার প্রধান সেডিরক সুসটার বলেছিলেন, ‘আমি এটা বাড়িয়ে বলছি না যে আমাদের দ্বীপগুলো ডুবে যাচ্ছে। একটা দুর্বল চুক্তি নিয়ে আমরা আমাদের নারী, পুরুষ ও শিশুদের কাছে ফেরত যাবো এটা আপনারা প্রত্যাশা করেন কী করে।’
পরে রবিবার কিছু পরিবর্তন এনে চুক্তিটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এ সময় করতালি ও উল্লাস করেন অনেকে। তবে ভারতীয়দের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছিলো গভীর হতাশা থেকেই গেছে। এরপর সুইজারল্যান্ড, মালদ্বীপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ কিছু দেশ প্রতিবাদ জানায়। তারা বলছে জীবাশ্ম জ্বালানির বৈশ্বিক ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য চুক্তিতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা খুবই দুর্বল।
তবে আরও অর্থের অঙ্গীকার মানে হলো, দরিদ্র দেশগুলো যে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যায্য বোঝা বহন করে চলেছে তার প্রতি একটি স্বীকৃতি। জলবায়ু সংকটের পেছনে এসব দেশের অবদান তুলনামূলক অনেক কম, কিন্তু তারাও এর শিকার হচ্ছে।
নতুন করে এবার যে অর্থের প্রতিশ্রুতি এসেছে সেটি আসবে সরকারি মঞ্জুরি ও ব্যাংক -ব্যবসার মতো বেসরকারি খাত থেকে। তবে দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে আরও সহায়তা করা দরকার। তিনশ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দেশগুলো একমত হয়েছে যে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অন্তত ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার দরকার।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।
বিডি-প্রতিদিন/শআ