হঠাৎ দেখে যে কারো মনে হতে পারে ভারতের সংসদে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতা চলছে। তবে একটু খেয়াল করলেই ভুল ভাঙবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দেশটির শিল্পপতি গৌতম আদানির মুখোশ পরে সংসদ ভবনে গেলেন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের দুই সংসদ সদস্য মানিকম টেগোর এবং সপ্তগিরি শঙ্কর উলাকা। প্রথম জনের মুখে মোদির মুখোশ, আর দ্বিতীয় জনের মুখে আদানির। এই মুখোশ-প্রতিবাদ অভিনব না হলেও অভিনবত্ব রইল রাহুল গান্ধীর ভূমিকায়। মোবাইল ফোনে দু’জনের ছবি তুলতে তুলতে লোকসভার বিরোধী দলেনেতা জানতে চাইলেন, মোদী এবং আদানির মধ্যে সম্পর্ক কী? রসিকতা করে তার উত্তরও দিলেন দু’জনে।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই আদানি-বিরোধী প্রতিবাদকে উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে চাইছে কংগ্রেস। ‘আদানি ঘুষকাণ্ড’ নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ার পরেই সম্প্রতি সংসদের মকর দ্বারের সামনে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখান রাহুল। যদিও তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হয়নি ‘ইন্ডিয়া’র দুই দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এবং তৃণমূল।
সোমবার খানিক নাটকীয় ঢঙেই মোদি এবং আদানি সেজে সংসদে আসেন কংগ্রেসের ওই দুই সংসদ সদস্য। দু’জনের ছবি তুলতে তুলতেই রাহুল তাদের বলেন, দু’জনের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে। তার পর দুই সাংসদ একে অপরের হাত ধরে হিন্দিতে বলেন, “আমরা একসঙ্গেই সব করব। আমাদের বহু বছরের সম্পর্ক।” মনে করা হচ্ছে, রসিকতার আড়ালে মোদি এবং আদানির ‘ঘনিষ্ঠতার’ প্রসঙ্গে টেনে দু’জনকে কটাক্ষ করা হয়েছে।
রাহুলের প্রশ্নের জবাবে আদানির মুখোশ পরা কংগ্রেস এমপি মোদির মুখোশ পরা এমপির উদ্দেশে বলেন, “আমি যা বলি, উনি তা-ই করেন।” এই মন্তব্যের পরেই আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিরোধী এমপিদের মধ্যে হাসির রোল ওঠে। প্রসঙ্গত, রাহুল দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করছেন যে, শিল্পপতি আদানির নির্দেশে পরিচালিত হন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
মার্কিন আদালতে আদানিদের বিরুদ্ধে ‘প্রমাণ-সহ অভিযোগপত্র’ (ইনডিক্টমেন্ট) জমা পড়েছে গত ২০ নভেম্বর। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত পাওয়ার বিনিময়ে ভারতের মন্ত্রী এবং আমলাদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গৌতম আদানি এবং তার ভাইপো সাগরসহ সাত জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাতে। শীতকালীন অধিবেশনের গোড়া থেকেই আদানিকাণ্ডের তদন্তে জেপিসি গঠনের দাবিতে সরব কংগ্রেসসহ ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা। কিন্তু আদানি-বিক্ষোভে শরিক হয়নি এসপি, তৃণমূল এবং আম আদমি পার্টি (আপ)।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল