একটা সময় ছিল যখন বরপক্ষকে গরুর গাড়ি চেপে দেখা যেত, আবার বিয়ে করে গরুর গাড়িতে চড়ে শ্বশুরবাড়িতে আসতে দেখা যেতে নববধূকেও। কিন্তু সে দিন গেছে যে চলে। প্রত্যন্ত গ্রামেও এই ছবি এখন আর দেখা যায় না। শহরের কথা তো ছেড়েই দিলাম।
কিন্তু বিয়েতে আবার সেই পুরনো প্রথা ও ঐতিহ্য তুলে ধরলেন এক নতুন দম্পতি। বিয়ে করার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে নববধূকে সাথে নিয়ে গরুর গাড়ি চড়ে নিজের বাড়ি ফিরলেন এক যুবক।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শ্রীনিকেতন বোলপুর ব্লকের সর্পলোনা আলবাধা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোবিন্দবালা গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল ভান্ডারী। পাত্রী রাখি দাসের বাড়ি সর্পলোনা আলবাধা গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনপুর গ্রামে। দুই বাড়ির মধ্যে দূরত্ব মেরে-কেটে দুই কিলোমিটার। গত রবিবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মঙ্গল ভান্ডারী ও রাখি দাস। সোমবার সকালের দিকে নববধূকে সঙ্গে নিয়ে গরুর গাড়িতে চেপে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন মঙ্গল।
মঙ্গল জানান তার 'মা-বাবাও বিয়ের পর গরুর গাড়ি করেই বাড়ি এসেছিলেন। ফলে পুরোনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই তাদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন মঙ্গল। তবে দূরে বিয়ে হলে সেক্ষেত্রে অন্য কিছু যানবাহনের বন্দোবস্ত কথা ভাবতেন মঙ্গল।
তবে গরুর গাড়িতে চেপে শ্বশুর বাড়িতে আসার বিষয়টি বেশ মনে ধরেছে নববধূ রাখি দাসের। স্বামীর এই চিন্তাভাবনাকে সাধুবাদও জানিয়েছেন তিনি। তবে মনে মনে ভয়ও ছিল, গরু যদি গুঁতিয়ে দেয়!
রাখির বেড়ে ওঠা শহরে। কিন্তু পরিবারের কথামত গ্রামের ছেলেকে জীবনসঙ্গী করেছেন। ফলে গরুর গাড়ি তার কাছে একটু নতুন বৈকি! সেই রাখি জানান, আধুনিক যুগে এসে আমরা অনেক কিছুই ভুলতে বসেছি। বর্তমানে গ্রামের নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা গরুর গাড়ি, লাঙ্গল- এইসব চেনে না। তাই সেইসব পুরনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এই ছোট উদ্যোগ।
তবে সব মিলিয়ে গরুর গাড়িতে চেপে শশুর বাড়িতে আসা- এক নতুন অভিজ্ঞতা হল বলে জানান নববধূ।
গরুর গাড়িতে চেপে নব দম্পতির বিয়ে করে ফিরে আসার ঘটনায় গ্রাম জুড়ে হইচই পড়ে যায়। গ্রামবাসীরাও এই মুহূর্তটিকে মোবাইল ক্যামেরাবন্দি করতে দেরি করেননি। কেউ কেউ আবার চলন্ত অবস্থাতেই সেলফিও তোলেন।
বিডি প্রতিদিন/এমএস