ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার কথা উড়িয়ে দিল ভারত।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে। কোনও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার কারণে নয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও হস্তক্ষেপ এতে ছিল না।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সম্প্রচার সংস্থা এনওএস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ভারতের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে এবং ভারত এই ধরনের হুমকির জবাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে।
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করে ভারত। তবে পাকিস্তান সেই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।
এরপরও পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের নয়টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায় ভারত। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় অপারেশন সিঁদুর। এতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়।
ওই অভিযান নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, অপারেশন সিঁদুর চলমান রয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তা হলো ২২ এপ্রিলের মতো ঘটনা ঘটলে জবাব দেওয়া হবেই। আমরা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করব। তারা যদি পাকিস্তানে থাকে, সেখানেই তাদের আঘাত করা হবে।
তবে তিনি স্পষ্ট করেন, এই চলমান অপারেশন মানেই সরাসরি যুদ্ধ নয়। অপারেশন সক্রিয় থাকা মানে দু’পক্ষ যুদ্ধ করছে এমন নয়। বর্তমানে একটি যুদ্ধবিরতি ও সামরিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সুতরাং এটি এখন নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে রয়েছে।
জয়শঙ্কর জানান, ১০ মে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হটলাইন মারফত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় এবং ভারত তাতে সম্মত হয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রথমে জানায় তারা গোলাগুলি বন্ধ করতে প্রস্তুত এবং আমরা সাড়া দিই।
অন্যান্য দেশ- যেমন যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এবং উভয়পক্ষকে ফোন করেছিল, তবে যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণভাবে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যকার বিষয় বলেই জয়শঙ্কর দৃঢ়তার সঙ্গে জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ছিল যুক্তরাষ্ট্রেই। এটা দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ওয়াশিংটনের কোনও সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। তিনি নিশ্চিত করেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাকে ফোন করেছিলেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু এই ফোনকল ছিল শুধুই উদ্বেগ জানাতে।
জয়শঙ্কর বলেন, আমরা সবার কাছে, শুধু আমেরিকার নয়, সবাইকে স্পষ্ট করে বলেছি- পাকিস্তান যদি যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়, তাহলে তারা আমাদের জানাক। আমরা এটা তাদের সেনাপতির মুখে শুনতে চাই। আর সেটাই ঘটেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই বহুল আলোচিত দাবি- তিনি এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন এবং ‘হাজার বছরের পুরোনো দ্বন্দ্ব’ সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন, এটা একেবারে উড়িয়ে দেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, এটি আমাদের ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। আমরা একে দ্বিপাক্ষিকভাবে মীমাংসা করব। সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে
বিডি প্রতিদিন/একেএ