ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) এই সপ্তাহে পরপর সপ্তমবারের মতো সুদের হার কমাতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত বাণিজ্য নীতির প্রভাব ইউরোজোনের দুর্বল অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।
ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ট্রাম্পের অনিয়মিত শুল্ক আক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই, মুদ্রাস্ফীতি কমতে থাকায় ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) ঋণের খরচ ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করেছিল।
ইউরোজোনের অন্তর্ভুক্ত ২০টি দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স ক্রমেই মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে উঠেছে। কারণ উচ্চ সুদের হার ব্যবসা ও সাধারণ পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যে ইউরোপের বড় পরিমাণ উদ্বৃত্ত থাকায় তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজরে পড়েছে, যার ফলে মহাদেশটির রপ্তানিকারকদের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এইচএসবিসি পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সুদের হার কমানো হতে পারে। তাদের মতে, সাম্প্রতিক মার্কিন শুল্ক ঘোষণা এবং সেগুলো ঘিরে তৈরি অনিশ্চয়তার কারণে ইউরোজোনের নিকটবর্তী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি খারাপের দিকে গেছে।
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, ইসিবি আবারও এক চতুর্থাংশ (০.২৫ শতাংশ) সুদের হার কমাবে, যার ফলে ফ্রাঙ্কফুর্টভিত্তিক এই সংস্থার মূল ডিপোজিট হার নেমে দাঁড়াবে ২ শতাংশে।
তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা জুন মাসের এই হার কমানোই হতে পারে চলমান ধারাবাহিকতার শেষ ধাপ। ইসিবি সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য সম্ভবত জুলাইয়ের পরবর্তী বৈঠক পর্যন্ত বিরতি নিতে পারে।
ইসিবি যেখানে বারবার সুদের হার কমাচ্ছে, সেখানে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ হার ঠিক আগের অবস্থানে রেখেছে। কারণ ট্রাম্পের শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দাম বাড়ার (মুদ্রাস্ফীতি) আশঙ্কা রয়েছে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে একাধিক ধাপে শুল্ক বসিয়েছেন-বর্তমানে ইউরোপের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশের “বেসলাইন” শুল্ক এবং গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে।
ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপ করা বন্ধ রেখেছেন আলোচনার সুযোগ দিতে, যা সাময়িকভাবে বিশ্ববাজারে সৃষ্টি হওয়া চাপ কিছুটা কমিয়েছে।
তবে বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি এমন ইঙ্গিত হিসেবে, গত মাসে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর দ্রুত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। কিন্তু কয়েক দিন পর সেটি ৯ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করে দেন।
ইউরোপে অনুভূত শঙ্কার কথা তুলে ধরে ইসিবি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড গত সপ্তাহে বার্লিনে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, মার্কিন নেতৃত্বের সমর্থিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভাঙা হচ্ছে। বহুপাক্ষিক সহযোগিতা শূন্য-সমষ্টি চিন্তাভাবনা এবং দ্বিপাক্ষিক শক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে।
কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি ইউরোজোনকে মার্কিন প্রসিডেন্টের বাণিজ্য নীতি থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ইসিবি একটি জটিল কাজের মুখোমুখি হচ্ছে।
এপ্রিল মাসে ইউরো এলাকার মুদ্রাস্ফীতি ছিল ২.২ শতাংশ। যা ইসিবির দুই শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার সামান্য বেশি ও প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। মঙ্গলবার ইসিবি সভার আগে মে মাসের মুদ্রাস্ফীতির এ ধারণা প্রকাশ করা হবে।
তবে সাম্প্রতিক লক্ষণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে মূল্যের চাপ পূর্বাভাসের চেয়ে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং বৃহস্পতিবার ইসিবি তাদের নিজস্ব নতুন অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশ করার সময় মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাস কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : এএফপি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত