২০১৪ সালে যখন আইএস জঙ্গিরা ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, তিন বছর আগে মার্কিন সেনারা দেশটি থেকে প্রত্যাহার না হলে এই হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত না? আইএস জঙ্গিরা ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করার সময় ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পোশাক খুলে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময়ের বিশৃঙ্খলার মধ্যে এক সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, আমরা তাদের হারাতে পারব না। তারা রাস্তার লড়াইয়ে খুব প্রশিক্ষিত, আর আমরা নই। মসুল থেকে তাদের তাড়িয়ে দিতে আমাদের একটি সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী দরকার।
মসুল পুনরুদ্ধার ও মার্কিন সহায়তা
রাজধানী বাগদাদ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসা আইএস জঙ্গিদের তিন বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের পর অবশেষে বিতাড়িত করা হয় এবং মসুল পুনরুদ্ধার হয়। এই বিশাল সামরিক প্রচেষ্টার নেতৃত্বে ছিল ইরাকের অভিজাত কাউন্টার টেররিজম সার্ভিস, যা মার্কিন সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রত্যাবর্তনে আরও শক্তিশালী হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিতর্ক
মসুলের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র এবং আইএসের দখলের বিপর্যয়কর প্রভাব সম্ভবত ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের মনে এখনও গেঁথে আছে, কারণ তারা আবারও ইরাকে এখনও মোতায়েন থাকা আমেরিকান সৈন্যদের প্রত্যাহার করা উচিত কিনা তা নিয়ে বিবেচনা করছেন। বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাক সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দায়েশ-এর বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের মিশন 'অপারেশন ইনহেরেন্ট রেজলভ' শেষ করতে সম্মত হয়েছে। ইরাকে নিযুক্ত প্রায় ২,৫০০ মার্কিন কর্মীর বেশিরভাগই প্রাথমিক পর্যায়ে চলে যাওয়ার কথা, এবং অল্প সংখ্যক ২০২৬ সাল পর্যন্ত থাকবে।
অনেকের বিশ্বাস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতার কারণে এই বাহিনীর প্রত্যাহার দ্রুত করতে চাইবেন, অথবা ইরাকি সরকার অনুরোধ করলেও তাদের অবস্থান বাড়াতে রাজি হবেন না।
ভবিষ্যৎ ঝুঁকির আশঙ্কা
আইএসের স্লিপার সেলগুলির হামলার বৃদ্ধি, সিরিয়ার সীমান্তে অস্থিতিশীলতার ভয়, এবং ইরান ইরাকে তার প্রক্সি মিলিশিয়াদের শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার মধ্যে, আরেকটি সম্পূর্ণ মার্কিন প্রত্যাহার দেশকে আবারও অরক্ষিত করে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির গবেষণা পরিচালক এবং প্রাক্তন পেন্টাগন কর্মকর্তা ডানা স্ট্রুল আরব নিউজকে বলেছেন, "ইরাক থেকে অকাল প্রত্যাহারের ঝুঁকি হল, ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল ও কৌশলগত সহায়তা হারাবে, এবং আইএস পুনর্গঠিত হওয়ার এবং আবারও ইরাকি জনগণ ও রাষ্ট্রকে আতঙ্কিত করার সুযোগ পাবে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এই আলোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটেছিল, যা দেশকে একনায়কতন্ত্র থেকে মুক্ত করলেও সাম্প্রদায়িক গৃহযুদ্ধের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল।
সূত্র: আরব নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল