যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় জীবন রক্ষাকারী একটুকরো খাবার জোগাড় করাও এখন মরণপণ লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এক টুকরো রুটির জন্য প্রাণ হারাতে হলো ছয় সন্তানের বাবা হোসম ওয়াফিকে। ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রবিবার খাদ্য সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি হামলায় হোসমসহ অন্তত ৩১ জন প্রাণ হারান।
হোসমের মা নাহলা ওয়াফি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘সে মেয়েদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিল, ফিরে এল লাশ হয়ে।’ একইদিনে তিনি নিজের আরেক ছেলে ও এক ভাগিনাকে হারান।
নাসের হাসপাতালের উঠানে দাঁড়িয়ে তিনি তার ছোট নাতনিদের বুকে টেনে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু বুকভরা কান্না কোনোভাবেই থামছিল না।
হোসম তার ভাই ও ভাগিনাকে নিয়ে দক্ষিণ রাফাহ শহরের একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। তার মা জানান, তারা শুধু আটা সংগ্রহে গিয়েছিল। তখনই ড্রোন হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ভোর হওয়ার আগেই রাফাহর বিতরণ কেন্দ্রের এক কিলোমিটার দূর থেকে কিছু লোকজনকে লক্ষ্য করে ‘সতর্কতামূলক গুলি’ ছোড়া হয়।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস (আইসিআরসি) জানিয়েছে, তাদের রাফার ফিল্ড হাসপাতালে রবিবার ১৭৯ জন আহতকে আনা হয়, যাদের মধ্যে ২১ জনকে আনার সময়ই মৃত ঘোষণা করা হয়। আহতদের সবার দাবি, তারা ত্রাণ কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ অথবা বোমার ধ্বংসাবশেষে আহত হয়েছেন।
হোসমের কন্যারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানাচ্ছিল। তার লাশ সাদা কাপড়ে মোড়া অবস্থায় পরিবারের সামনে রাখা হয়েছিল। কিছু সময় পর লাশ কবরস্থানে নেওয়া হলে উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
হোসমের চাচা আলি ওয়াফি বলেন, একটা রুটির জন্য মানুষ যাচ্ছে, আর ফিরে আসছে লাশ হয়ে। সে তো শুধু খাবার আনতে গিয়েছিল, যুদ্ধ করতে যায়নি। কিন্তু ফলাফল? আজ তাকে কবরে শুইয়ে দিতে হচ্ছে।
গাজায় বর্তমানে এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। যেখানে হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকেই একে অপরকে ধাক্কা দিচ্ছেন, কেউ কেউ খাবার হারিয়ে ফেলার অভিযোগ করছেন।
ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে চারদিকে লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, পাহারায় রয়েছে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে আসা নিরাপত্তা কর্মীরা। খাবার বিতরণে ব্যবহৃত বাক্সে ‘GHF’ লেখা দেখা যায়।
হোসম ওয়াফির চাচা আলি আফসোস করে বলেন, গাজার মানুষ অন্তত নিরাপদে খাবারটা সংগ্রহ করতে পারত। মানুষ এখন জীবিত থাকার জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের মতে, গাজায় এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো জনগোষ্ঠী। আর এই অবস্থায় মানুষের সামনে একটিই পথ—মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল