গত কয়েক দিন ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতে একটানা ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে আসাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।
আসামে ভয়াবহ পরিস্থিতি
আসামের ২২টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে ১৫টি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অবিরাম ভারী বৃষ্টির কারণে সড়ক, রেল এবং ফেরি পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় পরিবহণ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লখিমপুর জেলা, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরেজমিনে পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন এবং রাজ্যবাসীকে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
সিকিমে সেনাসহ ১০ জনের মৃত্যু
টানা বৃষ্টি ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত সিকিমে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় মঙ্গন জেলার লাচেনের কাছে একটি সেনাশিবিরে ভূমিধসে তিন সেনা জওয়ান - হাবিলদার লক্ষবিন্দর সিংহ, ল্যান্সনায়েক মুনিশ ঠাকুর এবং পোর্টার অভিষেক লাখা - মারা গেছেন। এখনও নয়জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং তাদের উদ্ধারে কাজ চলছে। সিকিমের ডিজিপি অক্ষয় সচদেব জানিয়েছেন, লাচুং এবং চুংথাং শহরে আটকে পড়া ১,৬৭৮ জন পর্যটককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লাচেনে এখনও ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আটকে আছেন। লাচেন, লাচুং, গুরুদোংমার, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স এবং জিরো পয়েন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে তিস্তা নদী প্রবল বেগে ফুঁসছে।
মণিপুরে হাজার হাজার মানুষ বন্যার কবলে
গত চার দিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টির জেরে মণিপুরের বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। ৩,৩৬৫টিরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১০৩টি এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। প্রায় ১৯,৮১১ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইম্ফল নদীবাঁধে চারটি জায়গায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় পূর্ব ইম্ফল জেলায় ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।
অরুণাচল প্রদেশে ভূমিধস ও বন্যায় ১০ জনের মৃত্যু
অরুণাচল প্রদেশে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার লোহিত জেলা থেকে আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজ্যের ২৩টি জেলার ১৫৬টিরও বেশি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পশ্চিম কামেং, কামলে, সুবানসিরি, পাপুম পারে, দিবং উপত্যকা, লোহিত, চাংলাং, লংডিং-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। রাজ্যের বেশিরভাগ নদী ও তাদের উপনদীগুলো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভূমিধস এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়
গত কয়েক দিনে ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতও কমেছে। তবে, এখনও ১০,০০০-এরও বেশি মানুষ বিভিন্ন সরকারি ত্রাণ শিবিরে অবস্থান করছেন।
মিজোরামে ভূমিধস ও রাস্তা বন্ধ
গত ২৪ মে থেকে মিজোরামে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে মায়ানমারের তিন জন শরণার্থীও রয়েছেন। ভূমিধসের জেরে ২১২টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ধস এবং জল জমার কারণে বিভিন্ন এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সোমবারও ভারী বৃষ্টির জেরে রাজ্যজুড়ে সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল