নাম 'টাইগার' হলেও আদৌ সে 'বাঘ' নয়। গায়ে নেই কালো-হলুদ ডোরাকাটা ছাপও। উল্টো তার গায়ের রং ধবধবে সাদা। উচ্চতা পৌনে ছয় ফুটের কাছাকাছি। মালিককে কাছে পেলেই ঘাড় নেড়ে আদর খায়। ছিপছিপে চেহারার এই গরুটির নাম আদর করে 'টাইগার' রেখেছে তার মালিক।
আপাতত পশ্চিমবঙ্গের পার্ক সার্কাসের ১ নম্বর, রাইফেল রেঞ্জে রোডে 'আল্লাহ ভরসা' পশু হাটে এটিই সবচেয়ে দামি গরু। এই হাটে পশু কিনতে আসা সকলেই একবার উঁকি মেরে দেখছেন টারজানকে, কেউ বা ছুঁয়ে দেখছেন। মূলত তার জন্যই এই হাটের ইজ্জত নাকি কিছুটা বেড়েছে।
গরুর মালিক মইদুল ইসলাম ঘরামি জানান, এই গরুর ১২ থেকে ১৩ মণ মাংস হবে। আমি এখনো পর্যন্ত গরুর দাম রেখেছি ২ লাখ ৪০ হাজার রুপি। কিন্তু ক্রেতারা ২ লাখ রুপি দিতে রাজি হয়েছে। বাজারে এই গরুর দাম রয়েছে সাড়ে তিন লাখ রুপি। তবে আরেকটু বেশি অর্থাৎ ২ লাখ ২০ হাজার রুপি হলে ক্রেতার হাতে টাইগারকে তুলে দেবেন বলে জানান তিনি।
রাজ্যটির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরের বাসিন্দা গরুর মালিক মইদুল ইসলাম ঘরামি জানান, গত নয় মাস ধরে এই গরুটি পালন করছেন তিনি। এই গরুটি আন্দারিয়া জাতের। এটি পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া যায় না।
অন্ধপ্রদেশ থেকে বেশ কয়েকটি গরু তিনি নিয়ে আসেন। কয়েকদিন আগে বাসা থেকেই বিক্রি হয়েছে দুটি গরু। কয়েকটি বিক্রি হয়েছে মেটিয়াবুরুজের পশু হাট থেকে। একটিকে এই হাটে নিয়ে এসেছেন ঘরামি।
কলকাতার এই কোরবানির পশু হাটে মূলত দেশি গরুর দাপটই দেখা গেছে। মঙ্গলবার বিকালের দিকে একের পর এক গাড়িতে করে ছোট বড় বিভিন্ন আকারের গরু আসে এই হাটে। কোরবানির এই গরু কিনতে ক্রেতারাও ভিড় জমিয়েছেন। অনেককে আবার দেখা গেলো পরিবারের ছোট সদস্যদের সাথে নিয়ে গরুর দাম দরাদরি করতে।
তপশিয়ার বাসিন্দা মুহাম্মদ শামীম জানান, আবার বাজেট ৩০ হাজার রুপির মধ্যে। প্রতিবছরই আসি কারণ এই হাটে গরুগুলি খুবই ন্যায্য দামে পাওয়া যায়। কারণ আমাদের মতন গরিবদের বছরের অল্প করে পয়সা জমিয়ে কোরবানির সময় পশু কিনতে হয়।
গত প্রায় ১৫ বছর ধরে কলকাতার বুকে এই গরুর হাট বসে আসছে। রাইফেল রেঞ্জ রোড বয়েজ ক্লাব এন্ড ঈদগা কমিটির আয়োজনে এই পশু হাট বসে আসছে।
এই গরুর হাট কমিটির সম্পাদক শেখ সিকান্দার জানান, গত ২০ মে থেকে এই হাট শুরু হয়েছে। তপসিয়া, পদ্মপুকুর, হাওড়া সহ আশপাশের এলাকা থেকে গ্রাহক ক্রেতারা এই হাটে আসছেন। এই হাটে প্রায় পাঁচ শতাধিক গরু রয়েছে। প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে, আবার নতুন গরু আসছে।
তিনি জানান, সবচেয়ে কম দামে ১৫ হাজার রুপির গরু রয়েছে এক থেকে দেড় মণ মাংস হবে। কয়েকদিন আগে ২ লাখ ৭০ হাজার রুপির একটি গরু বিক্রি হয়, তাতে ১৫ থেকে ১৬ মণ মাংস হবে। আপাতত ২ লাখ ৪০ হাজার রুপির একটি গরু হাটে আছে।
এই গরুর হাটের পাশাপাশি কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটে অবস্থিত নাখোদা মসজিদের পাশের পশু হাটে বিক্রি হচ্ছে ছাগল ও দুম্বা। কলকাতার আশেপাশের জেলাগুলি থেকে যেমন ছাগল ব্যবসায়ীরা এসেছেন, তেমনি অন্য রাজ্য থেকেও বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে পশু নিয়ে আসতে দেখা গেছে। তবে অন্যবারের মতো এবারের পশু হাটে সেই ভিড় চোখে পরলো না। মুষ্টিমেয় কয়েকজন বিক্রেতা ছাগল ও দুম্বা নিয়ে এই। হাটে আসলেও ক্রেতার সংখ্যা আরো কম।
রাজস্থানের মেওয়ার থেকে আসা এক ছাগল বিক্রেতা জানান, কলকাতার বাজারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। মোট ৭০ টা পশু নিয়ে এসেছি, এখনো পর্যন্ত ৩০ টা বিক্রি হয়েছে। তবে আশা করি কোরবানির ঈদের আগে সবটাই বিক্রি হয়ে যাবে। তার কাছে ২৫ হাজার রুপি থেকে শুরু ৫০ হাজার রুপি দামের ছাগল রয়েছে।
কেনাবেচা যে হচ্ছে না তার স্বীকার করে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের হাবরা থেকে ছাগল নিয়ে ওই পশুহাটে যাওয়া এক বিক্রেতাও। তিনি জানান এখনো পর্যন্ত সেই ভাবে ক্রেতার দেখা নেই। ক্রেতারা ঠিক করে দামও দিতে চাইছে না। যে ছাগল আমরা ২০ হাজার রুপি দিয়ে কিনেছি এবং ২২ হাজার রুপিতে বিক্রি করব বলে ঠিক করেছি। অথচ ক্রেতারা ১৫/১৬ হাজার রুপির বেশি দাম দিতে চাইছে না। গতবারের চেয়ে এবারের বাজার অবস্থা খারাপ বলেও জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল