কখনো গোয়েন্দা, কখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আবার কখনো সাংবাদিক সেজে দিনের পর দিন প্রতারণা করার অভিযোগ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতারক চক্রের টার্গেট থাকতো দুর্বল ও সহজ-সরল বাংলাদেশি পর্যটকরা। প্রথমে সেই সমস্ত বিদেশি পর্যটকদের একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত করা, এরপর তাদের আইনের জালে ফাঁসিয়ে দেওয়া, গ্রেফতার করা, পরিশেষে সেই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত করার ভয় দেখানো হতো। ফলে সম্মানহানি, হেনস্তার হাত থেকে বাঁচতে কিংবা মানসম্মানের ভয়ে অনেকেই আপস করে নিতেন। আর প্রতিটা ক্ষেত্রে এই আপস হতো অর্থের বিনিময়ে। তাতেও কাজ না হলে ভয় দেখিয়ে চলতো অর্থ লুটপাট।
কিন্তু এবার আর তা হলো না! কেবলমাত্র মনের জোর এবং উপস্থিত বুদ্ধির সহায়তায় এক বাংলাদেশি পরিবার একদিকে যেমন ওই প্রতারণা চক্রের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করলেন, পাশাপাশি ওই চক্রের সদস্যদের তুলে দিলেন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
সম্প্রতি ভারতের গেদে (দর্শনা সীমান্তে) স্থলসীমান্তে এরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পুলিশের কাছে অভিযোগও আসে। কিন্তু কোনোভাবেই এই চক্রের হদিস খুঁজে পাচ্ছিলেন না আইন-শৃঙ্খলা বাইরে সদস্যরা। অবশেষে শুক্রবার সফলতা পেল পুলিশ।
গত শুক্রবারও ভারত-বাংলাদেশের গেদে দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলসীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের পরই এক বাংলাদেশি পরিবারকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। ওইদিন বিকেল নাগাদ মেডিকেল ভিসায় বৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের গেদে অংশে প্রবেশ করেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আসা এক বাংলাদেশি নাগরিক। স্থলসীমান্তের সংরক্ষিত এলাকা পার করার পরেই তাদের পরিবারের ৪ সদস্যকে ঘিরে ধরে তিনব্যক্তি। এদের মধ্যে কেউ নিজেকে ভারতীয় গোয়েন্দা, কেউ পুলিশ, আবার কেউ সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, কখনো আবার জঙ্গি তকমা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করার হুমকি দিতে থাকে। একসময় তাদের আপোষে মিটমাট করতে মোটা অর্থের জন্য চাপ দিতে করে প্রতারকরা।
প্রাথমিক পর্যায়ে ওই বাংলাদেশি নাগরিকরা হতভম্ব হয়ে পড়েন, মানসিকভাবে কিছুটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। একসময় উভয়পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলতে থাকে। তবে হাল ছাড়েননি। একসময় ওই তিন যুবকের অসঙ্গত আচরণে সন্দেহ হওয়ায় পাল্টা ঘুরে দাঁড়িয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে ওই চার বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নিমিষেই লোকজন দাঁড়িয়ে যায় রাস্তায়। ছুটে আসে বিএসএফ জওয়ানও। অবস্থা বেগতিক বুঝে এসময় পালাতে গেলে স্থানীয় মানুষদের হাতে ধরা পড়ে যায় ভুয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক বলে পরিচয় দেওয়া ওই তিন ব্যক্তি। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় কৃষ্ণগঞ্জ থানায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের তিনজনকে গ্রেফতার করে।
কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, স্থলসীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের সাথে প্রতারণার এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনাগুলোর সাথে গ্রেপ্তার হওয়া এই তিন অভিযুক্তের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক বলে পরিচয় দেওয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁর বাসিন্দা চঞ্চল পাল, পুলিশ বলে পরিচয় দেওয়া কলকাতার বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক কৌশিক দে এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তার পরিচয় দেওয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতের বাসিন্দা অবিনাশ সরকার। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
শনিবার তাদের কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হয়। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকেই ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিডি-প্রতিদিন/শআ