ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬.৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্যমতে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ জনে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, আজও আফটারশকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অফ ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি অনুসারে, আজ স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত কমপক্ষে ২২৫টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার বেশিরভাগই দেশটির বোগো সিটিতে আঘাত হেনেছে।
ম্যানিলার সিভিল ডিফেন্স অফিস (ওসিডি) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৬৯ জন নিহত এবং শত শত মানুষের আহত হওয়ার খবর পেয়েছে তারা।
ওসিডির ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বার্নার্ডো আলেজান্দ্রো বলেছেন, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন বোগো সিটির, শহরটি গত রাতে সৃষ্ট ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত।এছাড়া সান রেমিহিওতে ২২ জন, মেডেলিনে ১০ জন, টুবোগনে পাঁচজন এবং সোগোদ ও তাবুয়েলান শহরে একজন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, সংখ্যাগুলো আবারও যাচাই করতে হবে। এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। তবে উদ্ধারকারীরা ধসে পড়া কাঠামোর ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। অসংখ্য ঘরবাড়ি ও পুরাতন গির্জা ধসে পড়েছে, সেতু ও যানবাহন ভেঙে পড়েছে।
উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা জীবিতদের খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেক বাসিন্দা তাদের বাড়ির বাইরে অবস্থান করছেন কারণ আফটারশক হয়েছে। ভূমিকম্পে আহতদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের হাসপাতালের ভবনের বাইরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সেবুর প্রাদেশিক সরকার দুর্যোগ পরিস্থিত ঘোষণা করেছে এবং ত্রাণ প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য সেনা ও বিমান বাহিনীর সৈন্য মোতায়েন করেছে।
পরপর দু’টি টাইফুনে এক ডজনেরও বেশি লোকের মৃত্যু এবং অস্বাভাবিকভাবে বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পরেই ভূমিকম্প আঘাত হানলো।
ভূমিকম্প কোথায় আঘাত হেনেছিল?
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১২টার কিছু আগে ভূমিকম্পটি ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত সেবু দ্বীপের উত্তর প্রান্তে আঘাত হানে। এই অঞ্চলটি ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জ নামেও পরিচিত। সেখানে প্রায় ৩২ লাখ মানুষ বসবাস করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার নিচে ছিল বলে রেকর্ড করেছে। এই অঞ্চলে একাধিক আফটারশকও রেকর্ড করেছে তারা।
সেবু ভিসায়াসের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে এবং এর সমুদ্র বন্দরগুলো কার্টো ও দেশের অন্যান্য প্রধান দ্বীপগুলোকে সংযুক্ত করেছে। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিজস্ব ভাষা ও আঞ্চলিক সংস্কৃতি রয়েছে যা রাজধানী ম্যানিলা থেকে আলাদা।
ভূমিকম্পের কারণ কী?
ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অফ ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজির একজন কর্মকর্তার মতে, মঙ্গলবার রাতে সেবুতে আঘাত হানা ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পটি মাটির নিচের এমন একটি ফাটলের কারণে হয়ে থাকতে পারে, যা গত ৪০০ বছরে কোনো শক্তিশালী কম্পন সৃষ্টি করেনি।
ইনস্টিটিউটের ভূমিকম্প পূর্বাভাস বিভাগের প্রধান উইঞ্চেল ইয়ান সেভিলা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অন্তত গত ৪০০ বছরে এই প্রথম এই ভূমিকম্প সৃষ্টিকারী ফাটলটি সরে গেলো। সেই কারণেই এটি বেশ শক্তিশালী ছিল।’
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে শত শত আফটারশক
গত রাতের ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকে সেবুতে শত শত আফটারশক অনুভূত হয়েছে।
ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অফ ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি অনুসারে, আজ স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত কমপক্ষে ২২৫টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার বেশিরভাগই বোগো সিটিতে আঘাত হেনেছে।
স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৩টা ৪৯ মিনিটে বোগো শহরে ৪ দশমিক ৭ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হেনেছে, যার কম্পন সেবু সিটি, পার্শ্ববর্তী লেইট দ্বীপ এবং আশেপাশের এলাকায় অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল তুলনামূলকভাবে ভৃপৃষ্টের ১০ কিলোমিটার গভীরে।
সূত্র : বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত