সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম দলন বাড়ছেই

ঈশ্বরে অবিশ্বাসী চীনের কমিউনিস্টরা এখন বৌদ্ধধর্ম প্রসারে উৎসাহী

ঈশ্বরে অবিশ্বাসী চীনের কমিউনিস্টরা এখন বৌদ্ধধর্ম প্রসারে উৎসাহী

কমিউনিস্টরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয়। তারা ধর্মচর্চাকে উৎসাহিত করে না। উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে চীনের কাজ কারবার আলাদা।    সেখানে মুসলিম দলনে এমন কাজ নেই যা চীন  করছে না। নিজের ঘোষিত রীতি ভেঙেও কাজ  করছে। ঈশ্বরবিশ্বাসী না হওয়া সত্ত্বেও কমিউনিস্ট     চীন জিনজিয়াং প্রদেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারকে উৎসাহিত করছে।

অ্যাসোয়টে প্রেস (এপি), সিএনএন, বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ইসলাম ধর্মকেই চীন তাদের প্রধান শত্রু বলে মনে করছে। মুসলিমদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আসলে চীন সহ্য করতে পারছে না, তুলে দেওয়া হচ্ছে মুসলিম বিধি-বিধান, বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সব বিধান। মুসলিম পুরুষ ও নারীদের জন্মশাসন ও বন্ধ্যাত্ব প্রক্রিয়া চলছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে। কিছু দিন আগে মক্কার রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে কোরআনের তিন লাখ কপি পাঠালে সেগুলোও বাজেয়াপ্ত করে চীন। এসব উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গবেষণায়। চীন অবশ্য প্রতিবেদনগুলো ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের অভিযোগ, পশ্চিমা গণমাধ্যম জিনজিয়াং বিষয়ে মিথ্যা তথ্য বানাচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক চীন বিশেষজ্ঞ আড্রিয়ান জেঞ্জ অবশ্য  মনে করেন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশিরভাগ তথ্যই অনেকাংশে সঠিক এবং বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। তার অভিযোগ, মুসলিমদের ধর্মীয়   বিশ্বাসের স্বাভাবিক অনুশীলনগুলোর ওপর নেমে আসছে দমনপীড়ন। শাস্তি দেওয়ার নামে চলছে বর্বরতা।  জানা গেছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ৪০৩ পৃষ্ঠার একটি নথি পায় নিউইয়র্ক টাইমস।   ৩১১ ব্যক্তি সম্পর্কে তদন্তের বিস্তারিত প্রতিবেদন পেয়েছে বিবিসি।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জিনজিয়ায়য়ের বাসিন্দা বা সেখানকার দেশত্যাগীদের সঙ্গে কথা বলে বহু তথ্য সামনে নিয়ে এসেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় সেখানে ‘জনতাত্ত্বিক গণহত্যা’-সহ মুসলিমদের ওপর আক্রমণের প্রকৃত ছবি। নতুন মসজিদ নির্মাণ দূরে কথা। চীন সরকার জিনজিয়াং প্রদেশের কোনো পুরনো মসজিদের সংস্কার পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। পুরনো মসজিদ সংস্কার বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে করা হলে তবেই মেলে অনুমতি। পবিত্র হজ যাত্রার অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। নির্বিঘেœ মুসলিমরা জুমার নামাজ আদায় করতে পারছেন না। হুই জেলায় বাধা দেওয়া হচ্ছে অতি প্রাচীন লিউ কাউলান ও কাশগড়   মসজিদে প্রবেশেও।

নামাজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রচার চালাচ্ছে চীন সরকার।। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৫০টিরও বেশি মসজিদ। মাদ্রাসা শিক্ষা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। গোপনে পড়তে হয় মুসলিম ধর্মগ্রন্থ। ১৯৯৬ সাল থেকে জিনজিয়াং প্রদেশের ৪০টি শহর ও গ্রামে অবস্থিত মাদ্রাসা ও হিফজখানা বন্ধ। ১৮ বছর না হলে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ চীনে নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ তুর্কি ভাষা ও আরবি বর্ণমালা। সব মিলিয়ে কমিউনিস্ট চীনে চলছে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অমানবিক জিহাদ। কিন্তু ঋণের মায়াজালে মুসলিম দুনিয়ার মুখ বন্ধ করে রেখেছে চীন। ইসলাম ধর্মের ওপর অমানবিক আক্রমণেও তাই আন্তর্জাতিক দুনিয়া মোটেই সরব নয় বরং তাদের নিরবতা চৈনিক সরকারকে আরও বেশি হিংস্র করে তুলেছে।

পাকিস্তানের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব পুরোপুরি কায়েম করার পর কমিউনিজমের মুখোশে বিশ্ব রাজনীতির নয়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজের দেশে সামরিক শক্তি বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের ‘নাস্তিক’ ধর্ম। এক্ষেত্রে বড় বাধা ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তাই দেশের ভিতরে তাদের ওপর চলছে জনতাত্বিক গণহত্যা। খতম করা হচ্ছে চীনে ইসলাম ধর্মের উত্তরসূরিদের। আর বাইরে ঋণের মায়ায় বন্ধ করা হচ্ছে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। আশার কথা, বিভিন্ন দেশকে আর্থিক সহায়তার মোড়কে ঋণের জালে আটকে রাষ্ট্রীয় নেতাদের মুখ বন্ধ করার চীনা কৌশল পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলো ধরে ফেলেছে।

সর্বশেষ খবর