দিন যত যাচ্ছে ততই বেহাল হয়ে উঠছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা ও সাধারণ মানুষের পরস্পরবিরোধী অবস্থান। নির্বিচার গুলিতে মরছে সাধারণ মানুষ। বিপরীতে সেনা-প্রণীত সংবিধান পুড়ছে আন্দোলনকারীদের হাতে। সাধারণ মানুষের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের বাস্তবতা যে কোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শানার বার্গেন। তার মন্তব্য মিয়ানমারে রক্তবন্যা আসন্ন। এ রক্তবন্যা এড়াতে নিরাপত্তা পরিষদকে পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।
বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ কথা বলেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত। ক্রিস্টিন বলেন, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন তীব্র হওয়ায় মিয়ানমারে একটি রক্তবন্যা আসন্ন হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের এ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ক্রিস্টিন বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী সেনাবাহিনী দেশ পরিচালনায় সক্ষম নয়। দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কেবল খারাপের দিকেই যাবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
নিরাপত্তা পরিষদকে ক্রিস্টিন বলেন, ‘যা ঠিক, মিয়ানমারের জনগণ যা পাওয়ার যোগ্য তা করুন। এশিয়ার কেন্দ্রে বহুমাত্রিক বিপর্যয় রোধ করুন।’সেনার বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জোট : গত দুই মাসে সেনাবিরোধী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৫০০ বিক্ষোভকারীর। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে একজোট হতে শুরু করেছে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো। গত শনিবার সেনার গুলিতে এক দিনে শতাধিক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। ওই দিন সেনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করেছে প্রত্যন্ত এলাকার জনজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গতকাল ভোরের দিকে উত্তর মিয়ানমারে কাচিন গেরিলা বাহিনী পুলিশের একটি পোস্ট দখল করে নেয়। বাহিনী জানিয়েছে, তারা বিক্ষোভকারীদের পক্ষে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারেন গেরিলা বাহিনী। গত শনিবার এ জনজাতি জঙ্গিগোষ্ঠীই প্রথম সেনার ওপরে হামলা চালিয়েছিল। তার জবাবে প্রত্যন্ত জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে সেনা। ইতিমধ্যে ১০ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। মিয়ানমার পার্লামেন্টের নির্বাসিত সদস্যরা সেনাবিরোধী যে গোষ্ঠী ইতিমধ্যে গড়ছেন আপাতত সেই সিআরপিএইচ গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন ড. সাসা নামে এনএলডির এক নেতা। তিনি গতকাল স্পষ্ট জানিয়েছেন, সেনার অত্যাচার রুখতে জনজাতি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সাহায্য নিতে তারা প্রস্তুত।
জনজাতি ও নাগরিক গোষ্ঠী একত্র হয়ে একটি ‘ফেডারেল আর্মড ফোর্স’ গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।