আত্মরক্ষা করতে করতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলাই করে ফেলল ইউক্রেন। কিয়েভের মিসাইল হামলায় কৃষ্ণসাগরে ডুবে গেছে সুবিশাল রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কভা। যদিও নিজেদের পরাজয় মানতে নারাজ পুতিনের দেশ। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, সমুদ্র উত্তাল থাকার কারণে জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। এদিকে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার কৃষ্ণসাগরে আচমকাই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আগুন ধরে যায় রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কভে। সে সময় জাহাজটি মধ্য কৃষ্ণসাগরে ছিল। জানা গেছে, ইউক্রেনের এ মিসাইলটি দীর্ঘক্ষণ ধরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কভার দিকে তাক করে রাখা ছিল। নজর রাখছিল ইউক্রেন সেনা। সুযোগ বুঝে তা নিক্ষেপ করা হয় কৃষ্ণসাগরে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিস্ফোরণের বিষয়টি স্বীকার করলেও পরাজয় মানতে নারাজ। এদিকে, জাহাজের মধ্যে রাখা সব আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ নষ্ট হয়ে গেছে বলেই জানিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষে ওডেসা মিলিটারি মুখপাত্র সার্জেই ব্র্যাটচুক বলেন, ‘রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজে ডোমেস্টিক নেপচুন ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে।’ পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘মস্কভা যুদ্ধজাহাজের ডুবে যাওয়া রাশিয়ার কাছে নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা।
ইতোমধ্যে দেড় মাস পেরিয়ে গেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। কিয়েভের কমান্ড সেন্টারে হামলার হুমকি দিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু, তার আগেই, বৃহস্পতিবার কৃষ্ণসাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজে বড়সড় বিপর্যয় পুতিনের দেশকে বড় ধাক্কা দিল বলেই মনে করা হচ্ছে। রুশ যুদ্ধজাহাজ বন্দর শহর মারিউপোল এবং ওডেসায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছিল। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধজাহাজের ক্ষতির কথা জানালে ওডেসার গভর্নর টেলিগ্রাম পোস্টে দাবি করেন, এটা ইউক্রেনেরই সাফল্য। এদিকে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তোভিচের বক্তব্য, যুদ্ধজাহাজের ৫১০ জন নৌসেনাকে অন্যত্র সরিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি টুইট করেছিলেন, ‘ইউক্রেনের হাতে অতিরিক্ত অস্ত্র না এলে যুদ্ধের নামে নিরন্তর রক্তপাত চলতেই থাকবে। মানুষের ভোগান্তি, কষ্ট, বিপর্যয় বাড়বে। মারিউপোল, বুচা, ক্রামাতোর্স্ক-তালিকা লম্বা হবে। একমাত্র ইউক্রেনই অস্ত্রশস্ত্র পেলে রাশিয়াকে রুখতে পারবে।’
মস্কভা ডুবির পর কিয়েভে শক্তিশালী বিস্ফোর : মিসাইল হামলাই রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কভা ডুবির কারণ- ইউক্রেনের এমন দাবির পর এবার দেশটির রাজধানী কিয়েভে শোনা যাচ্ছে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ। চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য রাশিয়ান সৈন্যরা কিয়েভের আশপাশ এলাকা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর গতকাল সেখানে শক্তিশালী বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেল। এদিকে কিয়েভ, দক্ষিণে খেরসন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ এবং পশ্চিমে ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরে বিস্ফোরণের পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, বন্দর শহর মারিউপোলের উত্তরে পোপাসনা এবং রুবিঝনে শহরে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, কয়েকটি ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য যান ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানায় তারা। তবে, এসব প্রতিবেদন যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনের তৈরি নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মস্কভাকে আঘাত করা হয়। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল করার পর ডিজাইন করা হয় এ অস্ত্র। বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স
