ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে একটা হলো ফিলিস্তিনের বাত্তির। সেখানকার জলপাই বাগান এবং আঙুর খেতের জন্য পরিচিত এ গ্রাম। এখানে প্রাকৃতিক ঝরনার পানি ব্যবহার করা হয় সেচের কাজে। কয়েক শতাব্দী ধরে এভাবেই জীবন বয়ে চলেছে সেখানে। প্রকৃতির কোলঘেঁষা এ গ্রামই অধিকৃত ‘ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক’ বা পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের সর্বশেষ ‘ফ্ল্যাশপয়েন্টে’ পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েল এখানে একটা নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন বা ‘সেটেলমেন্ট’-এর অনুমোদন দিয়েছে। এই নতুন বসতির জন্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে বহু মানুষের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি। শুধু তাই নয়, অনুমোদন ছাড়াই নতুন ইসরায়েলি ফাঁড়িও স্থাপন করা হয়েছে। যাদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি এই নতুন বসতি স্থাপনের জন্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাদের তালিকায় রয়েছে ঘাসান ওলিয়ান। তিনি বলেন, ‘নিজেদের স্বপ্ন গড়তে আমাদের জমি চুরি করছে ওরা।’
ইউনেস্কো জানিয়েছে, বাত্তিরকে ঘিরে বসতি স্থাপনকারীদের পরিকল্পনা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তবে এ গ্রাম কিন্তু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ জাতীয় ‘সেটেলমেন্ট’কে অবৈধ হিসেবে দেখা হয়। যদিও এ বিষয়ে ইসরায়েল সহমত পোষণ করে না। ওরা আন্তর্জাতিক আইন, স্থানীয় আইন, এমনকি ঈশ্বরের আইনকেও তোয়াক্কা করে না আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন ওলিয়ান।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা প্রধান রোনেন বার মন্ত্রীদের উদ্দেশে একটা চিঠি লিখে তাদের সতর্ক করেছিলেন। সেই চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, পশ্চিম তীরের ইহুদি চরমপন্থিরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী’ কাজ চালাচ্ছে এবং দেশের ‘অবর্ণনীয় ক্ষতি’ করছে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই কিন্তু অধিকৃত পশ্চিম তীরে দ্রুত বসতি স্থাপন হচ্ছে। ইসরায়েল সরকারের থাকা চরমপন্থিরা অবশ্য ‘গর্ব’ করে বলেন এই পরিবর্তন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে বাধা দেবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিজেদের ‘লক্ষ্য’ পূরণের জন্য গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে চাইছে এই চরমপন্থিরা। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, শিশুদের পোলিও টিকা দেওয়ার জন্য গাজা যুদ্ধে মানবিক বিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকাজুড়ে অন্তত ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়ার এই কর্মসূচি আগামীকাল (রবিবার) শুরু হবে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরও ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। অবরুদ্ধ এই উপত্যকাতে বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে বলে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, লাগাতার হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী এবং শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯৪ হাজার মানুষ।