ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ বৃদ্ধির মধ্যেই রাশিয়া জানাল, তারা আর নিজেদের ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি মানতে বাধ্য বলে মনে করছে না। স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনে বিরত থাকার শর্তে দুই দেশ এই চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এনডিটিভি লিখেছে, মস্কো তার নিরাপত্তায় ‘সরাসরি হুমকি’ সৃষ্টির জন্য ‘পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকাণ্ডকে’ দায় দিয়ে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি ‘যথাযথ জায়গায়’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনে নির্দেশ দিয়েছিলেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সোভিয়েত আমলের ওই চুক্তিটি মেনে চলার শর্তগুলো ‘বিলীন হয়ে গেছে’ এবং মস্কো আর চুক্তিটি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিজেদের আরোপিত বিধিনিষেধ মেনে চলবে না। ‘পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী ক্ষেপণাস্ত্রের সামর্থ্য বাড়াচ্ছে তা আমাদের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি,’ বিবৃতিতে তারা এমনটাই বলেছে বলে জানিয়েছে আরটি। পরে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভও স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য ন্যাটো দেশগুলোকে দায়ী করেন এবং বলেন, এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কোও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ‘এ নতুন বাস্তবতা এখন আমাদের সব প্রতিপক্ষকেই মেনে নিতে হবে। আরও পদক্ষেপ আসছে,’ বলেছেন দিনকয়েক আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল বাগযুদ্ধে জড়ানো মেদভেদেভ।
সাবেক এ রুশ প্রেসিডেন্ট এখন রাশিয়ার খুবই প্রভাবশালী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
রাশিয়া শর্ত মেনে চলছে না- এ অজুহাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালেই আইএনএফ চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তখন মস্কো বলেছিল, তারা চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে এবং ওয়াশিংটন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন না করলে তারাও এমন কিছু করবে না। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন, কৌশলগত বিভিন্ন এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ‘স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ডের’ পাল্টায় মস্কোও প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ‘পরিস্থিতি যখন ইউরোপ ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বানানো ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পথে অগ্রসর হচ্ছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন মনে করছে একই ধরনের অস্ত্র মোতায়েনে বিরত থাকার যে একতরফা স্থগিতাদেশ তা বজায় রাখার শর্তগুলো বিলীন হয়ে গেছে,’ বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে রুশ মন্ত্রণালয়।
১৯৮৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের মধ্যে আইএনএফ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যার অধীনে উভয়পক্ষ ৫০০ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের বহর সরিয়ে নিয়েছিল। মেদভেদেভকে শুরুর দিকে পশ্চিমা দেশগুলো ভøাদিমির পুতিনের তুলনায় উদারপন্থি ও সংস্কারক মনে করেছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাকে পশ্চিমের কঠোর সমালোচক হিসেবেই দেখা যাচ্ছে। মেদভেদেভ কয়েকদিন আগেই পারমাণবিক শক্তিধর দুই পরাশক্তির মধ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, এর পাল্টায় শুক্রবার ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি ‘যথাযথ জায়গায়’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেন। -এনডিটিভি