ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে অবস্থিত হওয়ায় দেশটিতে প্রায়ই শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও হয়ে ওঠে ভয়াবহ। সর্বশেষ কুনার প্রদেশে রবিবারের ভূমিকম্পে ৮০০ জনের বেশি প্রাণহানি হয়েছে এবং আহত হয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ। গত এক দশকে দেশটিতে সংঘটিত বড় ভূমিকম্পগুলোর বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো।
হেরাত প্রদেশ : ২০২৩ সালের অক্টোবরে হেরাত প্রদেশে টানা তিন দফা ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৭ অক্টোবর প্রথমে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। তিন দিন পর ১১ অক্টোবর আবারও একই মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এরপর ১৫ অক্টোবর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। ব্রিটিশ রেড ক্রসের তথ্যানুসারে, এই তিন দফায় অন্তত ২ হাজার ৪৪৫ জনের মৃত্যু হয়। এটিকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হচ্ছে।
বাদাখশান : ২০২৩ সালের ২১ মার্চ বাদাখশান প্রদেশে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া সীমান্তবর্তী এই প্রদেশে অন্তত ১৩ জন প্রাণ হারান। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অনেক ঘরবাড়ি ধসে পড়ে।
কুনার ও নানগারহার : ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কুনার ও নানগারহার প্রদেশে দুই দফা ভূমিকম্প হয়। প্রথমটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১ এবং দ্বিতীয়টির ৪ দশমিক ৬। এ ঘটনায় অন্তত আটজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
পাকতিকা, পাকতিয়া, খোস্ত ও নানগারহার : ২০২২ সালের ২২ জুন পূর্ব আফগানিস্তানের পাকতিকা, পাকতিয়া, খোস্ত ও নানগারহার প্রদেশে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ঘরবাড়ি ধসে পড়ে অন্তত ১ হাজার জন নিহত হন। এটি সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ছিল।
বাদগিস প্রদেশ : ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি বাদগিস প্রদেশের কাদিস জেলায় ৫ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এতে অন্তত ২৬ জন প্রাণ হারান।
হিন্দুকুশ অঞ্চল : ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের তথ্যানুসারে, কেবল আফগানিস্তানেই অন্তত ১১৭ জন নিহত হন। পাকিস্তানের সরকারি হিসাবে প্রতিবেশী দেশটিতে প্রাণ হারান আরও ২৭২ জন। -এএফপি ও বিবিসি
ভূমিকম্পের কম্পন ভারতসহ আশপাশের বহু দেশেও অনুভূত হয়েছিল।
ত্রাণসহায়তা দিতে টিম প্রস্তুত : ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর আফগানিস্তানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে ইউনিসেফের স্থানীয় টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক মানবিক সংস্থা (ইউনিসেফ)। ইউনিসেফের কাবুল অফিসের কর্মকর্তা সালাম আল জানাবি জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সড়কপথে যাতায়াত এখনো বন্ধ রয়েছে। সম্ভবত শত শত বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি জানান, ‘পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ভবনগুলো প্রায় একটি অন্যটির গা ঘেঁষে নির্মিত হওয়ায় সবকিছু একে অপরের ওপর ভেঙে পড়ছে।’
ইউনিসেফের প্রধান অগ্রাধিকার স্বাস্থ্য, শিশু সুরক্ষা, পানি এবং স্যানিটেশনের সুযোগ করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় রবিবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬। দুর্ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৮ শতাধিক মানুষ নিহত এবং ৩ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।