২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১১:৪০

আল্লাহ মানুষকে ভাষা শিখিয়েছেন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহ মানুষকে ভাষা শিখিয়েছেন

প্রতীকী ছবি

প্রতিটি সৃষ্টিরই একটি ভাষা আছে। সে ভাষা দিয়ে নিজেদের মধ্যে যেমন যোগাযোগ করে, তেমনি যোগাযোগ করে অন্যদের সঙ্গে। যেমন একটি কুকুর, তার ঘেউ ঘেউ ভাষা দিয়ে অন্য কুকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আবার সে কুকুর তার মুখ ও শরীরের ভাষা দিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে। মানুষ বুঝতে পারে, কুকুরটি কী বলতে চায়। কুকুরের করুণ দৃষ্টি আমাদের হƒদয়ে দরদ জাগায়। আমরা আমাদের খাবারের অংশ কুকুরের দিকে ছুড়ে মারি। এই যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ এবং আরেকটি সৃষ্টি কুকুরের মাঝে ভাবের আদান-প্রদানের অপূর্ব কলাকৌশল এটাই মূলত প্রভুর সৃষ্টি ভাষা বৈচিত্র্যের অনুপম নিদর্শন। একটি শিশু কাঁদলে আমরা বুঝি, তার খিদে পেয়েছে কিংবা সে রাগ করেছে, আবার একটি শিশু হাসলে বুঝি সে আনন্দে আছে, তাহলে বোঝা যাচ্ছে এ কান্না-হাসিই শিশুর ভাষা। শিশু যদি না কাঁদত, না হাসত তাহলে মা কীভাবে বুঝত শিশুর এখন খাওয়া প্রয়োজন!

পবিত্র কোরআনের সূরা আর রহমানে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর রাহমান। আল্লামাল কোরআন। খালাকাল ইনসান। আল্লামাহুল বায়ান।’ পরম দয়াময় আল্লাহতায়ালা। তার দয়ার প্রথম উদাহরণ হলো তিনি মানুষকে কোরআন শিখিয়েছেন। দ্বিতীয় উদাহরণ হলো, তিনি মানুষকে ‘বায়ান’ শিখিয়েছেন।’ ফারসি বায়ান শব্দের অর্থ হলো, কথা বলা, ভাষণ দেওয়া, বক্তৃতা করা ইত্যাদি। আর আরবি বায়ান শব্দের অর্থ হলো, কোনো সৃষ্টির বেঁচে থাকার জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু হাতে-কলমে শিখিয়ে দেওয়া। আল্লাহপাক মানুষকে শুধু কথা বলা শিখিয়েই থেমে যাননি, তার রুহ সৃষ্টির সময় থেকেই দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে তার পাশে থেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কীভাবে চললে জীবন সুন্দর হবে, শান্তি হবে...। যদিও বান্দা সব সময় মনের কান লাগিয়ে বিবেকের কষ্টিপাথরে যাচাই করে প্রভুর কথা মেনে চলে না।

বলছিলাম, ভাষার কথা। আল্লাহ ভাষা সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন ভাষা বৈচিত্র্য। মানুষের ভাষা এক রকম। পশুর ভাষা আরেক রকম। পাখির ভাষা আরেক রকম। বাতাসের ভাষা একরকম। আগুনের ভাষা ভিন্নরকম। আবার পানির ভাষা পুরোপুরি আলাদা। আমরা যে বলি পানি শান্ত, আগুন গরম, বাতাস মৃদু, কীভাবে বলি? ওদের ভাষা অনুভব করেই বলি। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এক সৃষ্টির সঙ্গে আরেক সৃষ্টির ভাষার অনুভূতিও ভিন্ন। এই ভিন্নতা না থাকলে জগৎ এত সুন্দর, এত অপরূপ, এত ভয়ঙ্কর, এত মায়াময় হতো না। গভীরভাবে ভাবতে বসলে দেখা যাবে, সৃষ্টিজুড়ে ভাষার খেলা। ভাষাহীন একটি অণুকণাও কেউ খুঁজে পাবে না। খুব গরম লাগলে আমরা অস্থির হয়ে পড়ি, খুব ঠা-া পড়লে আমরা কাতর হয়ে পড়ি, বৃষ্টির সময় আমাদের একরকম লাগে,  ঝড়ো বৃষ্টির সময় অন্য রকম লাগে। কেন লাগে, ওই ভাষার কারণেই লাগে। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের মনের গভীর যোগ রয়েছে। যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষ মনের ভাষার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। কিন্তু মন প্রকৃতির ব্যাপারে উদাসীন নয়। তাই তো হঠাৎ জোছনার আলো দেখলে, বৃষ্টির শব্দ শুনলে, নদীর কলকল ছলছল আওয়াজ কানে এলে, ফুলের গন্ধ শুঁকলে অল্প সময়ের জন্যও আমাদের মন উদাস হয়ে যায়। মন উদাস হয় মূলত এ জন্য যে, মন যাকে চায়, যাকে পেলে মন কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠবে, তাকে পায় না। যেদিন তাকে পেয়ে যাবে, সেদিন মন আর শূন্য থাকবে না, উদাস হবে না।

মন কাকে চায়, মন চায় তার প্রভুকে। প্রভুকে পেলেই মন পূর্ণ হয়ে যায়। প্রভুকে পাওয়ার জন্যই সৃষ্টিজুড়ের ভাষার খেলা ছড়িয়ে দিয়েছেন আল্লাহ।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

সর্বশেষ খবর