১৩ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:৩১

মৃত্যুর পর রুহ কোথায় থাকে

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.)

মৃত্যুর পর রুহ কোথায় থাকে

মৃত্যুর পর রুহ কোথায় থাকে—আলেমরা এ ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। প্রত্যেকের দাবির পক্ষে দলিল আছে। কেউ কেউ বলেছেন, মৃত্যুর পর রুহ জান্নাতে থাকে। আবার কেউ বলেছেন, রুহ জান্নাতের দরজায় থাকে। আবার অন্য একদল বলেছে, রুহ কবরে থাকে। আবার আরেক দল বলেছে, রুহকে ছেড়ে দেওয়া হয়, সেগুলো যেভাবে ইচ্ছা ঘুরে বেড়ায়। কেউ কেউ বলেছেন, এগুলো আল্লাহর কাছে থাকে। আরেক দলের মত হলো, মুমিনের রুহ আদম (আ.)-এর ডান হাতে এবং কাফিরের রুহ আদম (আ.)-এর বাম হাতে থাকে।

মূলকথা হলো, রুহ স্তর অনুসারে বরজাখে (মৃত্যুর পরের জীবন) বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। কোনো রুহ ঊর্ধ্ব জগতের সর্বোচ্চ ‘ইল্লিয়্যিনে’ অবস্থান করে। এগুলো হলো নবীদের রুহ। তাদের রুহও পরস্পর মর্যাদা অনুসারে বিভিন্ন অবস্থানে থাকে। যেমন—নবী (সা.) মিরাজের রাতে দেখেছেন।

আবার কিছু রুহ সবুজ পাখির পাকস্থলীতে করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়ায়। এগুলো শহীদের আত্মা।

আবার কারো রুহ জান্নাতের দরজায় অবস্থান করবে। যেমন—ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘শহীদরা জান্নাতের দরজায় দীপ্তমান নহরে সবুজ গম্বুজবিশিষ্ট স্থানে থাকবে, সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য জান্নাত থেকে খাবার আসবে।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২৩৯০; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৬৫৮)

তবে জাফর ইবনে আবু তালিব (রা.)-এর ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন হবে। কেননা আল্লাহ তার দুই হাতের বিনিময়ে দুটি ডানা দিয়েছেন, যা দ্বারা তিনি ইচ্ছামতো জান্নাতের যেখানে খুশি সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

আবার কারো রুহ জমিনে আবদ্ধ থাকে। তার রুহ ঊর্ধ্ব আসমানে যাবে না। কেননা এসব রুহ জমিনের নিম্নে থাকার রুহ। জমিনে অবস্থানরত রুহগুলো আসমানে অবস্থানরত রুহের সঙ্গে মিলিত হবে না। যেমন—আসমানে অবস্থানরত রুহগুলো জমিনে অবস্থানরত রুহের সঙ্গে মিলিত হবে না। যেসব রুহ দুনিয়াতে রবের পরিচয় লাভ করেনি, তাঁর ভালোবাসা অর্জন করেনি, তাঁর জিকর করেনি, তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব অর্জন করেনি, তাঁর নৈকট্য লাভ করেনি ইত্যাদি রুহ হলো জমিনে অবস্থানরত রুহ। মৃত্যুর পরে শরীর থেকে তাদের রুহ বের হলে তা জমিনেই অবস্থান করবে।

এভাবে ঊর্ধ্বমুখী নফস, যা দুনিয়াতে আল্লাহর ভালোবাসা, জিকর, নৈকট্য লাভ ও বন্ধুত্ব স্থাপনে সর্বদা ব্যস্ত ছিল, সেগুলো শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পরে তার উপযোগী ঊর্ধ্বজগতের রুহের সঙ্গে মিলিত হবে। ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে তার সঙ্গে বারজাখে ও কিয়ামতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বারজাখে ও কিয়ামতের দিন রুহগুলোকে একে অন্যের সঙ্গে মিলিত করে দেবেন। তিনি মুমিনের রুহ তার অনুরূপ মুমিনের রুহের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। অতএব, মৃত্যুর পর রুহ শরীর থেকে আলাদা হলে তার আমল অনুযায়ী তার আকৃতির উপযোগী ও সমজাতীয় রুহের সঙ্গে থাকবে। তখন সেখানে তাদের সঙ্গে থাকবে।

আবার কিছু রুহ জিনাকারী ও জিনাকারিণীর সঙ্গে থাকবে, কিছু রুহ রক্তের নদীতে সাঁতার কাটবে, কিছু রুহকে পাথর গ্রাস করবে। অতএব, সব রুহ একই স্থানে সুখে বা দুঃখে থাকবে না; বরং কিছু রুহ ‘ইল্লিয়্যিনের’ সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বজগতে থাকবে। আর কিছু রুহ জমিনের নিম্নস্তরে থাকবে। সেটা বলা হয় ‘সিজ্জিন’।

ঈমানদারের রুহ থাকবে ‘ইল্লিয়্যিন’-এ। আর পাপী ও অবিশ্বাসীদের রুহ থাকবে ‘সিজ্জিন’-এ।

‘রুহ’ নামক গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন সাখাওয়াত উল্লাহ

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর