মানুষের জন্য একটি সুন্দর অর্থবহ নাম খুব গুরুত্বপূর্ণ; বরং নাম রাখার ক্ষেত্রে শব্দের চেয়েও অর্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থবহ নাম রাখা মা-বাবার ওপর সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর অধিকার। মানবজীবনের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির ওপর নামের একটি প্রভাব থাকে। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) অসুন্দর কিংবা খারাপ অর্থবহ নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রেখে দিতেন।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক নারীর নাম ‘আছিয়া’ (অমান্যকারী) থেকে পরিবর্তন করে ‘জামিলা’ (সুন্দরী) রেখেছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪৯৭)
মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আতা (রহ.) বলেন, ‘জায়নাব বিনতে আবু সালামা (রা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার মেয়ের নাম কী রেখেছ? তিনি বলেন, আমি তার নাম রেখেছি ‘বাররাহ।’ অতঃপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ধরনের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। আমার নামও ‘বাররাহ’ রাখা হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা নিজেদের ‘পরিশুদ্ধ’ (বাররাহ অর্থ পরিশুদ্ধ) দাবি কোরো না। কেননা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন তোমাদের মধ্যে কে পুণ্যবান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৯৫৩)
হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) ইয়াসরিব (নিন্দা, তিরস্কার, ভর্ত্সনা) থেকে পরিবর্তন করে মদিনাকে ‘মদিনা’ বলে নামকরণ করেন।
ভালো নাম রাখা
সন্তানের ভালো নাম রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিচার দিবসে মানুষকে নিজের নাম ও বাবার নাম ধরে ডাকা হবে। নাম যদি খারাপ হয়, তাহলে সেদিন সেসব হাশরবাসীর সামনে লজ্জিত হবে। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে তোমাদেরকে তোমাদের এবং তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা তোমাদের সুন্দর নামকরণ করো।’(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৮)
অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে সুন্দর নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৩২)
খারাপ নাম না রাখা
খারাপ নাম পরিহার করে ভালো নাম রাখা মা-বাবার ওপর সন্তানের বিশেষ অধিকার। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সাহাবায়ে কিরাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সন্তানের ওপর পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে জানি, কিন্তু পিতামাতার ওপর সন্তানের কী অধিকার আছে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তার সুন্দর নাম রাখা এবং উত্তম আদর্শ শিক্ষা দেওয়া।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৮২৯১)
অন্য হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন, কোনো ব্যক্তি যেন তার দাস কিংবা সন্তানের নাম হারব, মুররাহ, ওয়ালিদ (নামগুলোর অর্থ যথাক্রমে যুদ্ধ, তিক্ত, শিশু) না রাখে।’ (তাবরানি, হাদিস : ৯৯৯২)
এ জন্য অর্থহীন অসুন্দর নাম পরিহার করা উচিত। বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোনো নবী-রাসুল, সাহাবায়ে কিরাম কিংবা বুজুর্গ ব্যক্তির নামের সঙ্গে মিল রেখে নবজাতকের সুন্দর নাম রাখা মা-বাবার একান্ত কর্তব্য।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ