দেশে পোষা প্রাণী পালনে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর মধ্যে কুকুরের চেয়ে বিড়াল পালনে মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই অনলাইন ও অফলাইনে রমরমা হচ্ছে দেশি-বিদেশি কুকুর-বিড়ালের ব্যবসা। পাশাপাশি এদের খাবার, চিকিৎসাসামগ্রী ও সাজসজ্জার উপকরণেরও চাহিদা বাড়ছে দিন দিন।
তাই প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব এসব প্রাণীর লালন-পালন ও বেচাকেনা সম্পর্কিত মাসআলা জেনে রাখা।
কুকুর-বিড়াল লালন-পালন কি
জায়েজ : কুকুর অত্যন্ত বুদ্ধিমান একটি প্রাণী, বাড়িঘর, গরু-ছাগল ইত্যাদি পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর বেশ দক্ষ। আসামি ও অবৈধ অস্ত্র খোঁজার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যবহার করে। তাই শুধু পাহারা ও নিরাপত্তার কাজে কুকুর পালনের সুযোগ আছে, তা ঘরের বাইরেই রাখবে।
তবে ইসলামে অহেতুক কুকুর পালনে নিরুৎসাহ করা হয়েছে।
কারণ কুকুর নাপাক প্রাণী। ঘরে কুকুর থাকলে মুমিনের বহু ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পশু রক্ষাকারী কিংবা শিকারি কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর পালে, তার আমল থেকে প্রতিদিন দুই কিরাত পরিমাণ সওয়াব কমে যায়। (বুখারি, হা: ৫৪৮২)
উল্লেখ্য, এক কিরাত সওয়াব একটি ওহুদ পাহাড় সমপরিমাণ সওয়াবকে বলা হয়।
কুকুর সঙ্গে থাকলে ফেরেশতারাও কাছে আসে না বলে হাদিসে পাওয়া যায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৫৫)
একবার ঘরে কুকুর অবস্থানের কারণে নবীজি (সা.)-এর ওহি আসা বন্ধ হয়েছিল।
(মুসলিম, হাদিস : ৫৪০৬)
এমনকি নবীজি (সা.) কোনো পাত্র থেকে কুকুর পান করে ফেললে সে পাত্র পরিষ্কার করার জন্য সাতবার ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, কুকুর কোনো পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধুতে হবে, প্রথম অথবা শেষবার মাটি দ্বারা ঘষতে হবে। বিড়াল যদি তাতে মুখ দেয় তবে একবার ধোয়াই যথেষ্ট। (তিরমিজি, হাদিস : ৯১)
তবে বিড়াল যেহেতু নাপাক নয় এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিড়ালগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে, তাই তা পালনে নিষেধাজ্ঞা নেই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, বিড়াল নামাজ বিনষ্ট করে না। কারণ তা ঘরের জিনিসপত্রের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৯)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, কাবশাহ বিনতু কাআব (রা.), আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, (কাবশাহ ছিলেন আবু কাতাদাহর পুত্রবধূ) তিনি আবু আবু কাতাদাহ (রা.)-এর অজুর পানি ঢেলে দেন। তখন একটি বিড়াল এসে সেই পানি পান করে। আবু কাতাদাহ (রা.) পানির পাত্রটি তার দিকে ঝুঁকিয়ে দিলেন এবং আমি তার দিকে তাকাতে লাগলাম। তিনি বললেন, হে ভাতিজি! তুমি কি বিস্ময়বোধ করছ! রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, বিড়াল অপবিত্র নয়। এটা তো তোমাদের আশপাশে বিচরণকারী বা বিচরণকারিণী।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৭)
কুকুর-বিড়াল বেচাকেনা : সাধারণত কুকুর-বিড়াল বেচাকেনা নিষিদ্ধ। হাদিসে কুকুর-বিড়ালের বেচাকেনা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
(মুসলিম, হাদিস : ৩৯০৭)
তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, শিকারি কুকুর ছাড়া অন্যান্য কুকুরের বিক্রয়মূল্য নিতে নিষেধ করা হয়েছে।
(তিরমিজি, হাদিস : ১২৮১)
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ