এতদিন রাজনীতিতে অভিজ্ঞ মানুষদেরই রাজনীতির ময়দানে দেখা যেত। ট্রেন্ডটা বদলেছে ২০০৯ সালে। সে বছর লোকসভার ভোটে সেলিব্রেটি আমদানি করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। নির্বাচনে হইহই করে জিতে পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন তাপস পাল, শতাব্দী রায়ের মতো রূপালি জগতের তারকারা। সেই থেকে শুরু। এরপর প্রতি নির্বাচনেই এসেছে নতুন সেলিব্রেটি মুখ। এবারও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন তার ব্যতিক্রম নয়।
২০০৯ সালের পর ২০১১ সালের বিধানসভার নির্বাচন। সেবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে সাবেক সচিব, ক্রিকেটার, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রার্থী করে বড় চমকটা দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যসচিব মণীশ গুপ্ত, আইপিএস পুলিশ অফিসার সুলতান সিং এবং রচপাল সিং, অভিনেতা চিরঞ্জিত, অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়, নাট্যকার ব্রাত্য বসু, সঙ্গীতশিল্পী পরিক্ষীত বালা, অনুপ ঘোষালের মতো সেলিব্রেটিরা ছিল সেই তালিকায়। পরিবর্তনের হাওয়ায় বাংলার মানুষ এদের কাউকেই খালি হাতে ফেরায়নি।
২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনেও মুনমুন সেন থেকে শুরু করে দীপক অধিকারী (দেব), অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়, সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন, ভূমি ব্যান্ডের গায়ক সৌমিত্র রায়, নাট্যকার অর্পিতা বসু, ভারতীয় ফুটবলের সাবেক অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়াদের মতো সেলিব্রেটিদের দেখা গিয়েছিল নির্বাচনে লড়তে। এদের মধ্যে অনেকেই জিতে দিল্লি গেছেন।
পাঁচ বছরে পেরিয়ে সেই ধারা আজও অব্যাহত। এবারের নির্বাচনেও মমতার তুরুপের তাস সেই সেলিব্রেটিরা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রায়দিঘি থেকে লড়ছেন দেবশ্রী রায়, চন্দনগর কেন্দ্রে সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন, বাঁকুড়ার বড়জোড়া কেন্দ্রে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি কেন্দ্রে বাইচুং ভুটিয়া, হুগলির পান্ডুয়া থেকে সাবেক ভারতীয় ফুটবলার সৈয়দ রহিম নবি, বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে দীপেন্দু বিশ্বাস, হাওড়া উত্তর কেন্দ্রে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার লক্ষীরতন শুক্লা, বালি কেন্দ্রে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক কর্তা প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার কন্যা বৈশালী ডালমিয়া, উত্তরপাড়া থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রবীর ঘোষাল লড়াই করছেন।
তৃণমূলের দেখাদেখি বিজেপিও এবার সেলিব্রেটি প্রার্থীদের দিকে ঝুঁকেছে। হাওড়া উত্তর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলী, অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় লড়ছেন ময়ুরেশ্বর থেকে, সিউড়ি থেকে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে নামছেন অভিনেতা জয় ব্যানার্জি, দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী হয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সদস্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নাতি চন্দ্র কুমার বসু, আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন কার্গিল যুদ্ধের নায়ক কর্ণেল দীপ্তাংশু চৌধুরী।
তবে সেলিব্রেটিদের নির্বাচনী প্রার্থী করানো থেকে তৃণমূল, বিজেপি'র চেয়ে অনেকটাই দূরে কংগ্রেস ও বামেরা। সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোটের সেলিব্রেটি প্রার্থী হয়েছেন এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সাবেক সিপিআইএম সাংসদ জ্যোতির্ময়ী শিকদার।
সেলিব্রেটিকেন্দ্রিক কেন্দ্রগুলির অনেকগুলোতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল হাওড়া উত্তর। এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রূপার বিরুদ্ধে তৃণমূলের লক্ষীরতন শুক্লা ও বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। ভবানীপুর কেন্দ্রে চন্দ্র কুমার বসুকেও কঠিন লড়াই করতে হবে তৃণমূলের মমতা বন্দোপাধ্যায় ও জোট প্রার্থী দীপা দাসমুন্সির বিপক্ষে। বসিরহাট উত্তরে তৃণমূলের সেলিব্রেটি প্রার্থীকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে বিজেপির বর্তমান বিধায়ক সমীক ভট্টাচার্যের বিপক্ষে। একইভাবে বাঁকুড়ার বড়জোড়া আসনে তৃণমূলের সোহম চক্রবর্তীও ও জোট প্রার্থীর মধ্যে কঠিন লড়াই হতে পারে।
আগামী ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম দফার প্রথম পর্বের নির্বাচন। এই পর্বে ভোট হবে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ১৮ আসনে। প্রায় এক মাস ধরে চলবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। ভোট শেষ আগামী ৫ মে। গণনা ১৯ মে।
বিডি-প্রতিদিন/০১ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ