আর বকাঝকা বা সতর্ক করা নয়। এখন থেকে চিঠি বা প্যাডে মমতা ব্যানার্জীর ছবি ব্যবহার করলেই যেতে হবে জেলে। তা তৃণমূলের যত বড় নেতাই হোক না কেন! বুধবার কালীঘাটে নিজ বাড়িতে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে দলের নেতাদের এ কথা জানিয়ে দিলেন মমতা ব্যানার্জী।
সেই সঙ্গে বলে দেন, ‘‘একটা কথা সবাই সাফ বুঝে নিন। লোভীদের এ দলে আর স্থান হবে না।’’ সূত্রের খবর, দলের সর্বস্তরের নেতাদের বিবিধ বিষয় নিয়ে কথা বলতেই এ বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। বাঁকুড়ার জেলা সভাপতি অরূপ খাঁকে যেমন বলে দেন, ‘‘এখনও সব ব্লক কমিটি তৈরি করতে পারেননি। আপনি কেন জেলার সভাপতি থাকবেন?’’
বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে দাঁড় করিয়ে বলেন, ‘‘অন্যের পার্টি অফিস দখল আর বালি চুরি ছাড়া তো কিছুই করছ না!’’ এ সব সাত-পাঁচ কথার পরে এক সময়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলে একটা প্রবণতা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। লেটার হেডে নেত্রীর ছবি ছাপিয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে প্রশাসনের কাছে। আগেও সতর্ক করা হয়েছে। এগুলো কিন্তু বরদাস্ত করা হবে না।’’
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথা শেষ করার আগেই তাঁর হাত থেকে মাইক নিজের হাতে নিয়ে নেন মমতা। তারপর বলেন, ‘‘সতর্ক আবার কীসের? এ সব ঝামেলা দেখলে সোজা এফআইআর করবেন। পুলিশ অ্যারেস্ট করবে। তার পর কথা!’’ এই প্রসঙ্গেই ‘লোভীদের’ সতর্ক করেন তৃণমূল নেত্রী।
দলে নেত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, কলকাতায় এবং জেলায় তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সামনে রেখে অবাধ অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কাজও করছেন তাঁরা। কোনো কোনো নেতার আবার বিলাসের শেষ নেই। তাছাড়া, শাসক দলে নবাগত কিছু নেতার গতিবিধি দেখে মানুষের মনে এই ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, তৃণমূলে গেলেই বুঝি রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায়, গাড়ি-বাড়ি কেনা যায়।
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার কোর কমিটির বৈঠকে দলের এক সাংসদও এই ‘রোগের’ কথা তুলে ধরেছিলেন। মমতা-ঘনিষ্ঠ ওই মন্ত্রীর কথায়, ‘‘দিদি-র কাছে সব খবরই রয়েছে। এ বার বেনোজল দূর করা শুরু করেছেন তিনি।’’
দলের নেতা-কর্মী বা বাইরের কোনো লোককে তাঁর সঙ্গে সেলফি ‘নিজস্বী’ তুলতে এখন আর অনুমতি দেন না মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, দলে তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করতে অনেকে সেই ছবি দেখিয়ে পুলিশ-প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। এ দিকে কে কোথায় কী করে বেড়াচ্ছে, তার ঠিক নেই। তবে তাঁর দলেরই এক নেতার কথায়, ‘‘দুষ্টের ছেলের অভাব হয় না। জেলায় জেলায় তস্য ছোট নেতাও এখন লেটার হেডে দিদির ছবি ছাপাচ্ছে।’’
যদিও শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্দেশ্যে তৃণমূল নেত্রীর এই পদক্ষেপের কথা শুনে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘লোভী বাছতে গাঁ উজাড় না হয়ে যায়!’’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিডি প্রতিদিন/২ মার্চ ২০১৭/হিমেল