পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে ফের রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে তীব্র নিশানা করলেন ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সেই সাথে কেন্দ্রের বিগত কংগ্রেস সরকারকেও ছাড়লেন না তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে এক জনসভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগামহীন সন্ত্রাস, বিজেপি কর্মী খুন, সিন্ডিকেট, অরাজকতার অভিযোগ তুলে অমিত বলেন, ‘বাংলা আগে গোটা দেশকে পথ দেখাতো। এই দেশে রবীন্দ্রনাথ, চৈতন্য মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ, ক্ষুদিরাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই বাংলার মাটি এক সময় দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিল-অথচ সেই ‘সোনার বাংলা’ কোথায় হারিয়ে গেল। গোটা দেশের মানুষ দেখছে এরাজ্যে কি হয়েছে।’
বাংলা থেকে মমতার সরকারকে ছুঁড়ে ফেলার ডাক দিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘২০১৯ আগামী লোকসভার নির্বাচনে হয়তো নরেন্দ্র মোদি ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ওই নির্বাচন হবে ‘সোনার বাংলা’ ফিরিয়ে আনার, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার। এরাজ্য থেকে তৃণমূলকে সরাতে হবে। কারণ বাংলার মানুষ পরিবর্তন চায়।’ এক পর্যয়ে মমতাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘আগামী মে মাসের শেষে লোকসভা ভোটের গণনা শুরু হবে সকাল ৯টায়। ১০টার সময় প্রথম রাউন্ড, ১১টায় তৃতীয় রাউন্ড, ১২টায় পঞ্চম রাউন্ড এবং দুপুর ১টায় ভোটের গণনা শেষ হয়ে যাবে। আর দুপুর ২টায় মমতা সরকারের পতন শুরু।’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে অমিত শাহের কটাক্ষ ‘সোনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিং-এর দশ বছরের শাসনকালে ১২ লাখ কোটি রুপির টু-জি কেলেঙ্কারি দেখেছিলাম। সে সময় সরকারে দুটো জি (গান্ধী) ছিল-সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। আর এখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এসেছেন। এখন যদি থ্রি-জি আসে তবে দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির মাত্রা কোথায় যাবে?’
কংগ্রেস ও তৃণমূলের বিরদ্ধে পরিবার তন্ত্রের অভিযোগ এনে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘তারা উভয়েই পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী। কংগ্রেস ও তৃণমূল একই মুদ্রার দুই পিঠ। কংগ্রেসে জওহরলাল নেহেরু-ইন্দিরা গান্ধী-সঞ্জয় গান্ধী-রাজীব গান্ধী-সোনিয়া গান্ধী থেকে এখন রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে মমতার পর তার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি। এই পরিবারতন্ত্র দেশের মানুষের কখননোই ভাল করতে পারে না। এরা কেবলমাত্র এরা ‘হেল্পলেস’ সরকার দিতে পারে। তাই আমরা বলছি, দেশে মজবুত সরকার চাই-যেটা বিজেপিই দিতে পারে।’
অনুপ্রবেশ ইস্যুতে মমতার অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভোট ব্যাংকের জন্যই মমতা চুপ রয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে এ রাজ্যে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা হবে। এমনকি সীমান্ত পেরিয়ে একটা কবুতরও ঢুকতে পারবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন অমিত শাহ।
অমিত শাহ’এর সভা শেষেই উত্তেজনা ছড়ায় কাঁথিতে। বিজেপি সভাপতির সভামঞ্চের পাশে রাখা বিজেপির দলীয় কর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও একাধিক মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়। বিজেপির অভিযোগ তাদের ক্ষমতা দেখেই ভয় পেয়ে তৃণমূল এই কাজ করেছে। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
এদিন, আরামবাগের আরেকটি সভা থেকে বিজেপি নেতা ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বাংলা থেকে তৃণমূল সরকারকে হটানোর ডাক দিয়ে বলেন, ‘ভারতের মানুষ যদি লড়াই করে ইংরেজদের দেশ ছাড়া করতে পারে তবে তৃণমূলকেও হটানো সম্ভব। মমতা হলেন ধৃতরাষ্ট্র। ২০১৯ সালেই দিদির কৌরব বংশ ধ্বংস হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/২৯ জানুয়ারি, ২০১৯/মাহবুব