১৫ এপ্রিল, ২০১৯ ২৩:৩৩

এনআরসি'র নামে মুসলিমদের তাড়ানো হচ্ছে: মমতা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

এনআরসি'র নামে মুসলিমদের তাড়ানো হচ্ছে: মমতা

কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে প্রবল তোপ দেগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে বিভেদের রাজনীতির খেলায় নেমেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ধর্মকে ব্যবহার করেই বাংলায় মানুষে মানুষে বিভেদ করতে চাইছে তারা। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-এর নামে দেশ থেকে মুসলিমদের তাড়ানোর খেলায় নেমেছে বিজেপি।

সোমবার রাজ্যটির মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গায় এক নির্বাচনী জনসভা থেকে বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘আমরা রামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি, ভারত সেবাশ্রম সংঘকে বিশ্বাস করি, গঙ্গাসাগারের আশ্রম, অনুকূল ঠাকুর, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠকে বিশ্বাস করি। কিন্তু মোদি বাবু আপনারা যে হিন্দু ধর্ম আমদানি করেছেন তা আমাদের দেশের হিন্দু ধর্ম নয়। আপনাদের মানুষ মারার হিন্দু ধর্মে আমি বিশ্বাস করি না। এই হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমি জন্মাই নি। এটা আমার ধর্ম নয়। আমাদের হিন্দু ধর্ম উদার, সবাইকে নিয়ে চলার।’

মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা বেলডাঙ্গার জনসভা থেকে একসময় মমতা বলেন, ‘মোদি বাবু তোমার কিসের ধর্ম? এই দেশে রাষ্ট্রপতি হিন্দু, প্রধানমন্ত্রীও হিন্দু, সব গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছে তারাও হিন্দু। তবে হিন্দু ধর্মের রিপোর্ট পাও কোথা থেকে। তুমি শেখাচ্ছ বলে তাই হচ্ছে? ভাগাভাগি করে দিতে হবে। এই যে মানুষগুলো আমার দেশে আছে এরা কি মানুষ নয়। আমার বাংলায় শতকরা ৩০ শতাংশ মুসলিম ভাই-বোন আছে তারা কি মানুষ নয়? তারা কি থাকবে না? এনআরসি করে তাদের বাদ দিতে হবে...? এটা কি সহ্য করা যায়? এটা সহ্য করা যায় না।’

মমতা আরও বলেন, ‘আমি যেমন পুজোয় যাই তেমনি রোজায় যাই, ইফতার-ঈদেও যাই। কারণ আমার ভাল লাগে। সেখানে গিয়ে আমি আল্লার কাছে দোয়া চাই এবং বলি ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ আবার বড়দিনে বা গুরদোয়ারাতেও যাই। এটাই আমাদের সংস্কৃতি। কিন্তু একটা মোদি বাবু আরেকটা অমিত শাহ-এই দুই সাইন বোর্ড এসে আমাদের শিখিয়ে দেবে?

তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, ‘হিটলারি ও ফ্যাসিবাদি কায়দায় মোদি বাবু দেশ চালাচ্ছেন। এনআরসি তৈরি করে তারা বলছে সবাইকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দাও। আসামে ২০ লাখ হিন্দু ও ২০ লাখ মুসলিমকে ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা বাংলায় এনআরসি করতে দেবো না।’

বেলডাঙ্গার পর ওই জেলারই আরেকটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ‘ভগবানগোলা’তেও আরেকটি জনসভা করেন মমতা। সেখানেও প্রথম থেকে কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে চড়া আক্রমণ করেন মমতা। মোদি সরকার যে দেশের পক্ষে কতটা ভয়ঙ্কর তার ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, ‘মোদি সরকার আসার পর গোটা দেশকেই বদলে দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে ভারতকে ভেঙে চুড়মার করে দিয়েছে। তারা দেশের সংবিধান বাতিল করে দিচ্ছে। এরপর যদি মোদি আবার সরকার আসে তবে তাই আগামী দিনে ভারতের স্বাধীনতা থাকবে না, গণতন্ত্র থাকবে না। সংবিধান থাকবে, কোন ধর্ম থাকবে না। হয়তো দেশে আর কোনদিন নির্বাচনই হবে না।’

মমতার দাবি কংগ্রস ছেড়ে তিনি বেরিয়ে এসে তৃণমূল গঠন না করলে বাংলা থেকে সিপিআইএম-কে তাড়ানো যেত না। তার অভিমত, ‘আমি একটা সময় কংগ্রেস করতাম। কিন্তু কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছি তার কারণ হল সিপিআইএম-এর সাথে কংগ্রেসের একটা বোঝাপড়া ছিল। সকাল বেলায় এরা সিপিআইএম করে, দুপুর বেলায় কংগ্রেস করে, আর রাতে বিজেপি করে। আমার এই বোঝাপড়া পছন্দ ছিল না বলেই কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিলাম এবং তৃণমূল তৈরি করেছিলাম বলেই সিপিআইএম-কে আমরা এখান থেকে উৎখাত করতে পেরেছি। যদি তৃণমূল না করতাম, সিপিআইএম-কে বাংলা থেকে সরানো যেত না।’

তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘মনে রাখতে হবে সিপিআইএমকে ভোট দিলে ওই ভোটটা বিজেপিকে শক্তিশালী করবে। কংগ্রেসকে ভোট দিলে ওই ভোটটা বিজেপিকে শক্তিশালী করবে। আর তৃণমূলকে ভোট দিলে তৃণমূল কংগ্রেসের জোড়া ফুল ওই ভোট নিয়ে দিল্লিতে মোদি বাবুকে বদলে দেবে-তাই তৃণমূলকে ভোট দেওয়া দরকার, যাতে ভোট ভাগাভাগি না হয়। আমরা চাই না বিজেপি জিতুক। এরাজ্যে আমাদের ৪২ টার মধ্যে ৪২ টাই জিততে হবে।’

মমতার দাবি আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে তৃণমূলই দিল্লিতে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়বে। তাঁর অভিমত, ‘সব রাজ্যে যত আঞ্চলিক দল রয়েছে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠন করবো। আমরা বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে দেবো না।’

তার দাবি ‘অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরল, পাঞ্জাব,মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, ওড়িষ্যা, বাংলা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ-সবজায়তেই এবার শূণ্য পাবে। ১০০ টা আসনও এবার বিজেপি পাবে না।’  


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর