১৮ জুন, ২০১৯ ১৬:৫৭

এটা মিঠুন চক্রবর্তীর সংলাপ নয় যে, মারবো এখানে লাশ পড়বে সেখানে: মমতা

'যারা দল ছাড়ার তাড়াতাড়ি ছাড়ুন, চোরদের দলে রাখব না'

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

এটা মিঠুন চক্রবর্তীর সংলাপ নয় যে, মারবো এখানে লাশ পড়বে সেখানে: মমতা

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসে চোরেদের কোন জায়গা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। তিনি বলেন, যারা ডেডিকেটেড একমাত্র তাদেরকেই জায়গা দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক থেকে দলের বিধায়কদের উদ্দেশ্যে মমতা এই বার্তা দেন। সাম্প্রতিকালে তৃণমূল ছেড়ে দলের নেতা-কর্মীদের বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে মমতার বার্তা, ‘যারা যারা যাবেন তাড়াতাড়ি যান। আগে আগে চলে যান। তার কারণ আমাদের কাজগুলো শুরু করতে দিন। আমরা সব জায়গায় নতুন কর্মী তৈরি দিয়ে দিয়েছি। একজন যাবে, আমি ৫০০ জন তৈরি করবো। তবু আমি চোরেদের রাখবো না।’ 

মমতা বলেন, ‘যদি তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে থাকতে চান তবে বলবো, তৃণমূল কংগ্রেস এতো দুর্বল দল নয়। ১৫ জন বা ২০ জন কাউন্সিলর রুপি নিয়ে কোথাও চলে গেল, তাতে আমার বয়েই গেল। আমি নতুন লোককে টিকিট দেবো। কোথাও একটা গ্রামসভা চুরি করে পলিয়ে গেল, আমার কিছু যায় আসে না।’ 

তৃণমূলের কাউন্সিলরদের দল পরিবর্তন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা এখানে পঞ্চায়েত ও মিউনিসিপ্যালিটি চালাবেন আর দিল্লির সরকার রুপি দেবে-এ রকম হয় নাকি? কাজ করবেন এখানে আর রুপি আসবে ওখান থেকে-তা কি কখনও হয়? এটা মিঠুন চক্রবর্তীর সংলাপ নয়, যে মারবো এখানে লাশ পড়বে সেখানে। এটা হল বাস্তব পরিস্থিতি। মিউনিসিপ্যালিটি, পঞ্চায়েত সবই রাজ্য সরকারের অধীন। এটা মাথায় রাখতে হবে।’ 

কাউন্সিলদের আচরণ, জনসংযোগ ও লাইফস্টাইল নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে তার কাছে। আগামী দিনে তাদের কীভাবে চলা উচিত বা জনসংযোগ বাড়ানো উচিত সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘আজকাল একটা নতুন স্টাইল হয়েছে-চুরি করার পর যেই তারা ধরা পড়ছে, সাথে সাথেই অন্য একটি রাজনৈতিক দলে নাম লেখাচ্ছে। ভাবছে বেঁচে যাবে। তা হবে না। সরকারের কাছে তার প্রত্যেকটির হিসাব আছে। আমি যদি সরকারের রুপি তছনছ করি-আমিও যেমন দায়ী, তেমনি অন্য কেউ করলেও তারা দায়ী হবে। এটা এতো সহজ নয় যে অন্য দলে গিয়ে বেঁচে গেলাম। আরও বরং ফাঁসবেন। অনেকে আছেন যারা সরকারি সম্পত্তি নিজের বা তার পরিবারের নামে করে নিয়েছেন। মনে রাখতে হবে সরকারের সম্পত্তি জনগণের সম্পত্তি। এটা দখল করার অধিকার কারও নেই।’
 
মমতার অভিমত, ‘কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েতের সদস্যদের কাজ হচ্ছে মানুষের কাজ করা। কিন্তু এলাকায় যদি ভাল কাজ না হয় তবে তার দোষ এসে পড়ে দলের ওপর। আবার কাজ করলে তাতে দলের সুনাম বৃদ্ধি পায়। আমি নিজেও দেখেছি যে অধিকাংশ জায়গায় কাজ হয় না। কেবলমাত্র বাড়ি ও প্রমোটিং-এর সাথে সম্পর্ক। এটা ঠিক নয়।’

সাম্প্রতিক লোকসভার নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ফল করেছে বিজেপি। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৮টিতে জয় পেয়েছে তারা। তৃণমূল জয় পেয়েছে ২২টি আসনে। একাধিক কেন্দ্রে তার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেই বিজেপিতে যোগদান করার হিড়িক পড়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূল। তাদের একাধিক বিধায়ক, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্য ঘাসফুল ছেড়ে যোগ দিয়েছে বিজেপি শিবিরে। এমন এক পরিস্থিতিতে দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে অন্যদিকে বিভিন্ন দুর্নীতিতে যাদের নাম জড়িয়েছে-তাদের উভয়কেই বার্তা দিলেন মমতা। 
বক্তব্য চলাকালীন সময়ে রাজ্যটির নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও দলের সভাপতি সুব্রত বক্সিকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ‘একটা কথা বলে রাখবো যারা দল ছেড়ে চলে যাবে, তারা যদি দুইদিন বাদে পায়ে ধরে ফেরত আসতে চাইবে তা হবে না। এটাকে বন্ধ করতে হবে। আজকে চলে যাবে আর আগামীকাল পায়ে ধরে ফেরত আসতে চাইবে-এই জিনিস বন্ধ করুন। যারা আমাদের পুরনো কর্মী ভুল বুঝে চলে গেছেন-তারা যদি আসেন তাদেরটা বিবেচনা করুন। অন্যথায় হবে না।’ 

নাম না করে তৃণমূলের এক সময়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায় ও তার পুত্র শুভ্রাংশ রায়ের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘বাবা দল করতো, বাবার ছেলেকে আমরা টিকিট দিয়ে দিয়েছি। পকেট প্যাকেজ! যে বাবা-ছেলে ডেডিকেটেড তাদের দিতে হবে। যারা দল ছেড়ে যাবেন না, যারা দলকে মন্দির-মসজিদ-গুরদোয়ারার মতো ভালবাসবেন। কিন্তু যারা আজকে এই পা, কালকে ওই পা-তোমাদের জন্য দলে অনেক বদনাম সহ্য করেছি, আর নয়।’ 

বিডি-প্রতিদিন/১৮ জুন, ২০১৯/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর