তাকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় ‘নিহত বাঘের চেয়েও আহত বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনের আগে প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে ঠিক আহত বাঘের মতো হুঙ্কার ছেড়ে চলেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।
গত ১০ মার্চ পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে প্রচারণায় গিয়ে পায়ে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন মমতা। এরপর তিনদিন হাসপাতালে কাটিয়ে ফের রাজনীতির ময়দানে ফেরেন। এরপর হুইল চেয়ারে বসেই একের পর এক নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার সেই মেদিনীপুরেই পা রেখে বিজেপিকে লক্ষ্য করে তীব্র নিশানা চালালেন মমতা। আর বললেন খেলা হবে। মায়েরা রান্না করতে করতেই হাতা, খুন্তি নিয়ে খেলবেন।
শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরার জনসভা থেকে তারই মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদেরকে মীরজাফরের সাথে তুলনা মমতা বলেন ‘...চাকরি বাকরি নিয়ে আগে যারা গাদ্দাররা ছিল অনেকের সাথেই বেঈমানি করেছে। চিন্তা করবেন না, এবার কাজকর্ম সরাসরি হবে। কারো মাধ্যমে হবে না। যারা গাদ্দার, মীরজাফর তারা আজকের বিজেপির প্রার্থী। বিজেপির পুরনো লোকেরা নেই। তারা আজ মনের দুঃখে ঘরে বসে কাঁদছে। আর সিপিএমের হার্মাদ, তৃণমূল থেকে যেসব চোরচোট্টা, চিটিংবাজ বিজেপিতে গেছে তারা গিয়ে ওখানে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।’
তিনি আবারও বলেন ‘যদি কেউ মনে করে কয়েকজন গাদ্দার নিয়ে এসে মানুষের উপর অত্যাচার করবে, তা হবে না। অনেক সহ্য করেছি অনেক অন্ধ ভালোবাসা দিয়েছি তার পরিনামে ওরা যেটা আমায় দিয়েছে.. বিনা যুদ্ধে আমি এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বো। তাই খেলা হবে। রান্না করতে করতে হাতা, খুন্তি নিয়ে খেলা হবে। হাডুডু খেলা হবে, ফুটবল, ক্রিকেট নিয়ে খেলা হবে। আর বিজেপিকে মাঠের বাইরে বের করে দেওয়া হবে। বিজেপিকে বোল্ড আউট করা হবে। তাই বিজেপিকে একটি ভোটও দেবেন না। আমরা মোদির মুখ দর্শন করতে চাই না, দাঙ্গা চাই না। দুর্যোধন চাই না, দুঃশাসন চাই না, মীরজাফর চাই না, বহিরাগত গুন্ডা চাই না।’
বিজেপিতে নারীরা সুরক্ষিত নয় বলেও দাবি মমতার। তিনি বলেন ‘বিজেপিকেই জিজ্ঞাসা করুন, ওদের দলে কি মহিলারা, মা’য়েরা সুরক্ষিত? উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। আসলে ওরা (বিজেপি) দাঙ্গা করে, দুর্নীতি করে।’
মমতার অভিযোগ ‘নরেন্দ্র মোদির সরকার একটা অযোগ্য সরকার, দুর্নীতি, দাঙ্গাবাজের সরকার। লুট, দাঙ্গা, মানুষ খুন- বিজেপির তিনটা গুণ। রেল, বিএসএনএল, ব্যাংক, বীমা সব কিছু বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই ওদের একটা ভোটও নয়।’
‘সিপিএমের লোকেরা অতীতে তাকে মেরেছে তার মাথা, কোমর, হাত ভেঙে দিয়েছে। শুধু পা বাকি ছিল, এবার নির্বাচনের আগে পায়েও আঘাত করলো। কিন্তু এর থেকেও বড় আঘাত বিজেপি যদি আসে আমার মা, বোনেরা কেউ ঘরবাড়ি নিয়ে থাকতে পারবে না। বিজেপির হাত থেকে ওদের বাঁচাতে হবে। নির্বাচন আসলেই বিজেপি বলবে হরি হরি, আর পেছনে ডাকাতি করি।’
বাংলা বিজেপির জায়গা নয়, বিজেপির ঘর নয, বাংলা বাংলাতেই থাকবে।
রাজ্যে ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার’ (এনপিআর) করতে দেওয়া হবে না বলেও এদিনের সভা থেকে সাফ জানিয়ে দেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন ‘দেশে আমি একমাত্র রাজ্য, যেখানে এমপিআর করতে দেওয়া হয়নি।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল