একটি কাঁচা বাড়ি, যেখানে না আছে পানি, না আছে শৌচাগার। বাড়িতে নেই তেমন কোন আসবাবপত্র। তবে রয়েছে জামাকাপড় রাখার টিনের বাক্স, বাচ্চাদের বই রাখার টেবিল। আছে তিনটে ছাগল, তিনটে গরু। কোন রকমে সংসার চালানো ৩০ বছর বয়সী চন্দনা বাউরিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া কেন্দ্র থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
মাধ্যমিক পাসের পরই বিয়ে হয়ে যায় চন্দনার। তার স্বামী শ্রাবণ বাউরি পেশায় রাজমিস্ত্রি। রোজগার দৈনিক ৪০০ রুপির মতো। চন্দনা ও তার স্বামী দুইজনেই ১০০ দিনের কাজের নথিভুক্ত শ্রমিক। বর্ষাকালে যখন রাজমিস্ত্রির আকাল দেখা দেয়, তখন স্বামীর সাথে কাজে বের হন চন্দনা। তবু তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় চন্দনাকে।
প্রার্থী হিসেবে নিজের হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, তার ব্যঙ্কে জমা আছে মাত্র ৩১ হাজার ৯৮৫ রুপি। বাঁকুড়ার শালতোড়া আসনটি তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত। সেই কারণেই চন্দনাকেই প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছে বিজেপি।
এ ব্যাপারে চন্দনা জানায়, ‘স্থানীয় মানুষরা টেলিভিশনের পর্দায় খবরটা দেখেই আমাকে জানায়, তাদের কাছ থেকেই আমাকে প্রার্থী করার বিষয়টি জানতে পারি। আমি গরীব ঘরের মেয়ে। কিন্তু আমাকে প্রার্থী করে বিজেপি দেখিয়ে দিল যে একজন নেতা হতে গেলে অর্থ থাকাটা জরুরি নয়।’
এই কেন্দ্রে গত দুই বারের বিধায়ক তৃণমূলের স্বপন বাউরি। যদিও এবার স্বপনের বদলে সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে সন্তোষ কুমার মন্ডলকে।
চন্দনা জানান, ‘তৃণমূল কংগ্রেসে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ওরা কোন উন্নয়নের কাজ করেনি। উন্নয়নের কাজে নরেন্দ্র মোদির সরকার যে অর্থ পাঠাচ্ছে সবটাই তৃণমূলের লোকেরা নিজের পকেটে ভরেছেন। শৌচাগার থেকে বাড়ি নির্মাণ- সবটাইতে তৃণমূলের লোকেদের কাটমানি দিতে হয়।’ এমনকি নিজের বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় প্রাতকর্ম করতে প্রতিদিন সকালেই বাড়ির পাশের মাঠে যেতে হয় চন্দনাকেও। যদিও গত বছরই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের অধীনে দুইটি পাকা ঘর তৈরির জন্য প্রথম কিস্তি হিসাবে ৬০ হাজার রুপি পেয়েছে বলেও জানান চন্দনা।
চন্দনার স্বামী শ্রাবণ একটা সময় ফরওয়ার্ড ব্লকের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের কর্মীদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। এরপরই বিজেপিতে নাম লেখায় চন্দনার পরিবার। ২০১৬ সালে গঙ্গাজলঘাটি মন্ডলের মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত করা হয় চন্দনাকে। সেইসাথে বাঁকুড়া জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয় চন্দনাকে।
কয়েকদিন আগেও রোজ ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে রান্না করা, দূর থেকে পানি আনা, ঘরের কাজ করা, সন্ধ্যায় সন্তানদের পড়াতে বসানো- সবটাই তাকেই সামলাতে হতো। এত কিছুর পরও দলের কাজ করতেন। কিন্তু প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই সন্তানদের দেখাশোনা প্রায় অনেক কাজই শ্বশুর বাড়ির অন্য সদস্যরাই সামলাচ্ছেন।
আর প্রতিদিন কেলাই গ্রামের নিজের বাড়ি থেকে সকাল ৮টা নাগাদ প্রচারণার কাজে বেরিয়ে পড়ছেন চন্দনা। পরনে পদ্মফুল আঁকা গেরুয়া শাড়ি, মুখে একগাল হাসি নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন ভোট চাইতে। কখনও কখনও ছেলেকেও সাথে নিয়ে প্রচারণা সারছেন চন্দনা।
এবারে মোট আট দফায় রাজ্যের ২৯৪ টি আসনে ভোটগ্রহণ চলবে। প্রথম দফার ভোট আগামী ২৭ মার্চ, শেষ পর্বের ভোট ২৯ এপ্রিল, গণনা ২ মে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা