ভারত জুড়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। আদালতের অভিমত এই গাফিলতির জন্য কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হওয়া উচিত।
সোমবার এই সম্পর্কিত একটি মামলার শুনাতিতে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব ব্যানার্জি বলেন ‘এত সংক্রমণ বাড়ার জন্য দায়ী দেশের নির্বাচন কমিশন। কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা উচিত।’
আদালতের শুনানির সময় কমিশনের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন ‘নির্বাচন কমিশনের কোনও কান্ডজ্ঞান নেই। ভোট প্রচার যখন চলছিল, তখন আপনারা কি অন্য গ্রহে ছিলেন! আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কোভিড স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারেনি কমিশন।’
আদালতের অভিমত ‘জনস্বাস্থ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক সংস্থাকে যে এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে-এটাই আক্ষেপের বিষয় কেউ বেঁচে থাকলে তবেই তো গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন। এই মুহূর্তে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল মানুষের বেঁচে থাকা। তার পর অন্য সব।’
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি সেন্থি কুমার রামামূর্তিকে নিয়ে গঠিত এই বেঞ্চ ভোটের গণনার দিন কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে কমিশন কি ভাবছে- তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে নির্বাচন কমিশন ও তামিলনাড়ু মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাকে স্বাস্থ্য সচিবের সাথে আলোচনায় বসতে বলেছেন। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আদালতের কাছে পেশ করারও নির্দেশ দিয়েছে ওই ডিভিশন বেঞ্চ। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় আদালত।
এদিকে করোনার পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনের সাথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার শ্যামপুকুরের মিনার্ভা থিয়েটারে একটি ভার্চুয়াল সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন ‘মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আদালত পরিস্কার জানিয়েছে যে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আমরাও বারবার এই কথাই বলে আসছি। তামিলনাড়ু, কেরালায় এক দফায় ভোট হয়েছে, আসামে দুই দফায় হয়েছে আর বাংলায় ৮ দফায় করেছে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য।’
তিনি আরও বলেন ‘করোনার উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্য কমিশন ও প্রধানমন্ত্রী-উভয়েই দায়ী। বিজেপি প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি রুপির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তৃতীয় দফার ভোটের সময় কোভিড সম্পর্কিত পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছিল বুঝতে পেরেই দফা কমানোর জন্য আমরা চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম, কিন্তু কমিশন সেই দাবি শোনে নি।’
যদিও বিজেপির দাবি যে রাজ্যগুলিতে ভোট হচ্ছে না, সেখানেও সংক্রমণ বাড়ছে। তবে কিসের ভিত্তিতে বলা যাবে যে ভোটের জন্যই সংক্রমণ বাড়ছে। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আদালত যা বলে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তির ওপর ভিত্তি করে বলে। আমি বলতে চাই যে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা করোনা নিয়ে লড়ছে। মহারাষ্ট্রে এই মুহূর্তে কোনও নির্বাচন নেই। ঝাড়খন্ড, দিল্লিতেও কোন নির্বাচন নেই। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতায় রাজ্যে করোনা বাড়ছে। মানুষের জন্যই আইনের জন্ম হয়েছে, আইনের জন্য মানুষের জন্ম হয়নি। এই রায় হতাশাজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। সারা পৃথিবীতে কি নির্বাচন চলছে প্রশ্নও তোলেন শমীক।
গোটা ভারতে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ১ কোটি ৭৩ লাখের বেশি, মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল