বৃহস্পতিবার অনিবার্য কারণ বশত ‘নারদা’ ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার শুনানি হলো না, ফলে এই মামলায় গ্রেফতারকৃত পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রীসহ চার হেভিওয়েট নেতার পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশই বহাল থাকছে। এই চারজন হলে - রাজ্যটির পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, রাজ্যের পরিবহন ও আবাসন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক ও সাবেক পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র এবং কলকাতার সাবেক মেয়র ও রাজ্যের আরেক সাবেক মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে নারদা সম্পর্কিত দুইটি মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও অরিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। এরমধ্যে একটি হল জামিনের স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন, দ্বিতীয়টি এই মামলা অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করার বিষয় সম্পর্কিত। কিন্তু শুনানি শুরুর কিছু আগেই হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে ‘অনিবার্য কারণ বশত বসছে না কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম ডিভিশন বেঞ্চ।’ যদিও কবে এই বেঞ্চ বসবে তা এখনও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি ওই বিবৃতিতে।
নারদা স্টিং অপারেশন মামলায় অভিযুক্ত ওই চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীকে গত ১৭ মে (সোমবার) গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ওইদিন সন্ধ্যায় কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিশেষ সিবিআই আদালতে চারজনের জামিন মঞ্জুর হলেও উচ্চ আদালত (কলকাতা হাইকোর্ট) ওই জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে ও বুধবার পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। এরপরই তাদের প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও শারীরিক অসুস্থকার কারণে সুব্রত মুখার্জি, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, অন্যদিকে প্রেসিডেন্সি জেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু বুধবার ‘জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচন সম্পর্কিত মামলাটির শুনানিই হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবারের শুনানিতে তাদের জামিন হওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু সেটাও অনিবার্যকারণ বশত না হওয়ার কারণে কেউই জামিনে ছাড়া পাচ্ছেন না। আর সেই কারণেই নতুন বেঞ্চ গঠন করে মামলা স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছেন মদন মিত্রের আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য। ইমেল মারফত হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সচিবকে এবং কলকাতা হাবইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দ্বিতীয় একটি বেঞ্চ গঠনের আবেদন জানিয়েছেন। তার অভিমত কলকাতা হাইকোর্ট ক্ষমতাবলে নতুন বেঞ্চ গঠন করে সেই মামলা স্থানান্তরিত করতে পারে।
এদিকে হেভিওয়েট এই চার নেতা-মন্ত্রীর স্বাস্থ্যের দিকে কড়া নজর রেখে চলেছেন চিকিৎসকরাও। কারণ তাদের বয়স-সুব্রত মুখার্জির বয়স ৭৪ বছর, মদন মিত্রের ৬৬, ফিরহাদ হাকিমের ৬২ ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বয়স ৫৬ বছর। হাসপাতাল সূত্রে খবর সুব্রত, মদন ও শোভন- তিনজনেরই ‘ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজঅর্ডার’ (সিওপিডি) সমস্যা রয়েছে। বুধবার তাদের সকলেই একাধিক পরীক্ষা হয়।
জানা গেছে, মদন মিত্রের বুকের সিটি স্ক্যান করা হয়েছে, সিওপিডি ছাড়াও কয়েক দিন আগেই করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। টানা অক্সিজেনের বদলে তাকে মাঝে মধ্যে সি-প্যাপ দেওয়া হচ্ছে। শোভনের ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়েছে, পাশাপাশি রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখবেন চিকিৎসকরা। অক্সিজেন সম্পৃক্ততা ওঠানামা করছে, সেই সাথে রয়েছে মানসিক চাপ। শারীরিক ভাবে স্থিতিশীল থাকলেও মানসিক চাপ, সুগারের মাত্রা ওঠানামা করছে সুব্রতেরও। মেডিকেল রিপোর্ট পরীক্ষা করে দেখার পর তার ওষুধ তালিকায় কিছুটা পরিবর্তন করা হতে পারে। অন্যদিকে ফিরহাদের হাল্কা জ্বর আছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন