বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেদের বিপর্যস্ত করে ‘কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন’ ভোটে জয়ী হল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৪ টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়ে এই সভার বোর্ড গঠন করতে যাচ্ছে মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল। অন্যদিকে সম্প্রতি বিধানসভার নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়া বিজেপি ৩ টি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস ২ টি করে ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে এবং স্বতন্ত্র দলের প্রার্থীরা ৩ টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে। যদিও জয়ের পরই স্বতন্ত্র দলের তিন জয়ী প্রার্থীই তৃণমূলে যোগদানের বিষয়ে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পৌরসভার এই ওয়ার্ডগুলিতে ভোটগ্রহণ হয়। সোমবার ছিল তার গণনা। প্রধান লড়াই ছিল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। সকাল ৮ টা থেকে ভোটগণনা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্কার হয়ে যায় যে ছোট লালবাড়ির দখল ফের তৃণমূলের হাতেই যাচ্ছে। আর এরপরই জয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। সবুজ আবির, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে কলকাতা শহর জুড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তারা। মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির সামনেও উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন কর্মী-সমর্থকরা সেই সাথে চলে ‘খেলা হবে’ স্লোগান।
সেক্ষেত্রে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর ফের একবার সাফল্যের মুখ দেখলো তৃণমূল। অন্যদিকে বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অবক্ষয় এখনও চলে আসছে। ২০১৫ সালের পৌরসভার ভোটে ৫ টি ওয়ার্ডে জয় পেলেও এবার তার আগেই থামতে হয়েছে। অন্যদিকে শেষ কলকাতা পৌরসভার ভোটে ১৩ টি ওয়ার্ডে বামেরা জয়ী হলেও এবার তার ধারে কাছে পৌঁছতে পারলো না।
এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক অতীন ঘোষ, কাজরী ব্যানার্জি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভ্রাতৃবধূ), সাংসদ মালা রায়, বিধায়ক দেবাশিস কুমার ও পরেশ পাল, বিজেপির মীনা দেবী পুরোহিত প্রমুখ।
দলের এই সাফল্যের পর কালীঘাটের বাড়িতে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমি সকল মানুষ ও ভাই-বোনেদের প্রণাম, অভিনন্দন জানাই। গণ উৎসবের মতো করে এই নির্বাচন হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জয়। আমরা মা-মাটি-মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা যত আশীর্বাদ দেবেন, তত মাথা নত করে কাজ করবো। কলকাতা আমাদের গর্ব, বাংলা আমাদের গর্ব। তাই কলকাতা ও বাংলাই আগামী দিনে গোটা দেশকে পথ দেখাবে।’
যদিও কলকাতা পৌরসভার মেয়র পদে কে বসবেন তা নিয়ে আগাম কিছু বলতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বিকালে গুয়াহাটি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমান বন্দরে ফের সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, ‘আগামী ২৩ তারিখ দলের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে কলকাতার মহারাষ্ট্র ভবনে বৈঠক হবে। ওইদিনই মেয়নের নাম প্রস্তাব করা হবে।’ পাশাপাশি বিরোধী দলগুলিকেও কটাক্ষ করেন মমতা। তার অভিমত ‘বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএম মানুষের ভোটে হেরেছে। বিজেপি ভো-কাট্টা, সিপিআইএম নো-পাত্তা আর কংগ্রেস স্যান্ডউইচ হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন ‘এটা মানুষের জয়, তাই আমি মানুষের হয়ে কাজ করে যাবো।’
ট্যুইট করে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি লেখেন ‘কলকাতার মানুষ ফের একবার প্রমাণ করলো যে বাংলায় ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতির কোন জায়গা নেই।’
যদিও তৃণমূলের এই জয়ের পিছনে পেশীশক্তি কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়ের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান ‘কলকাতা পৌরসভার ভোটে জয়লাভের জন্য তৃণমল কংগ্রেস নিজেদের পেশীশক্তি ব্যবহার করেছে। গ্রাম-গঞ্জে ভোটে বোঝা যাবে কার কত দম।’ এই ভোটে বিরোধীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলেছে বলেও তার অভিযোগ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল