৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১১:২৬

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের পরিসর বাড়ানোর দাবি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের পরিসর বাড়ানোর দাবি

শনিবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের বইমেলা প্রাঙ্গণের এসবিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের পরিসর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। 

তার অভিমত ‘কলকাতা বইমেলায় অন্য দেশের প্যাভিলিয়ন আছে কিন্তু বাংলা বইয়ের পাঠকের সংখ্যাই বেশি। আর শনিবার বিকালে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের ভিড়ই বলে দিচ্ছে যে বাংলাদেশি বইয়ের পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু স্থান সংকুলানের অভাবে এ বছর ৪৩ টি প্রকাশনী সংস্থা এসেছে। এতটাই ভিড় হয়েছে যে স্টলগুলোতে দাঁড়িয়ে বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ নেই। ফলে কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ যাতে বিবেচনা করেন যে পাঠকদের সুবিধার্থে আগামী বছর পাঁচ হাজার বর্গ ফুট জায়গা দেওয়া হয়।’ 

এসময় পাশে থাকা সুধাংশু শেখার দে-কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘গিল্ড যেভাবে বরাবর পাশে দাঁড়িয়েছে আগামী বছরও ঠিক এভাবে পাশে দাঁড়াবে। ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় এবং সুধাংশু শেখার দে এই দুই ব্যক্তি যদি উদ্যোগ নেন তবে আমাদের দাবি পূরণ করা সম্ভব।’

৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় শনিবার পালন করা হলো বাংলাদেশ দিবস। এদিন সন্ধ্যায় সল্টলেকের বইমেলা প্রাঙ্গণের এসবিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা থেকে ওই দাবি জানান বাংলাদেশের প্রকাশক।

মাজহারুল আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই জায়গাটি আমাদের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির। দুই দেশের মধ্যে যে সেতু তৈরি হয়েছে তার মূল ভিত্তিই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ। সেক্ষেত্রে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে এই সম্পর্ককে আটকানো যাবে না।’ 

এদিন দুই বাংলাতেই বছরে একটি করে বইমেলার আয়োজনের প্রস্তাব দেন মাজহারুল। তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি ও কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড তিন বছর আগে সিদ্ধান্ত নেয় যে, প্রত্যেক বছর একবার করে দুই বাংলাতে একটি করে বই উৎসব হবে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৫০ জন প্রকাশক বাংলাদেশে যাবেন, আবার বাংলাদেশ থেকে ৫০ জন প্রকাশক কলকাতা বইমেলায় যোগ দেবেন। করোনার কারণে গত তিন বছর ধরে এটি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে আশা করছি, খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়িত হবে।’ 

মাজহারুল ইসলাম ছাড়াও এদিনের আলোচনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, ভারতের বিশিষ্ট কবি বীথি চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় এবং এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। 

অন্যদিকে কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার অংশ হিসেবেই চলতি বছরেই ঢাকায় এই বই মেলা করার জন্য দাবি জানান কলকাতা বইমেলার আয়োজক সংস্থা কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। 

তার বক্তব্য ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলাকে যেন সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেদিকে তাকিয়েই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় করতে চাই। তার অভিমত ২০২৫ সালে স্পেনের মাদ্রিদে বইমেলা ভারত ফোকাল থিম কান্ট্রি নির্বাচিত হয়েছে। সেখানেই আলাদা করে কলকাতাকে প্রাধান্য দেওয়া হোক। প্রাথমিকভাবে তাতে সম্মতিও জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে মাদ্রিদে যাওয়ার আগেই ২০২৩ সালে ঢাকাতে এই মেলা করতে চাই।’ এ নিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের আবেদন পৌঁছে দেওয়ার আবেদন জানান ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।

ত্রিদিব আরো বলেন, ‘১৯৯৬ সালে প্রথমবার কলকাতা বইমেলায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশ ক্রমশ তার স্থান বাড়াতে বাড়াতে বিশাল একটা জায়গা করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ থিম কান্ট্রি হল। সেই থেকে বাংলাদেশের বইয়ের প্রতি এপার বাংলার পাঠকদের চাহিদা তৈরি হলো। বাংলাদেশের বইয়ের বিক্রি বাড়লো।’ 

কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে বলেন, গত বছর কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ থিমকান্ট্রি ছিল। সে বছর অন্যান্য প্রকাশকে কম জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা বইমেলা বাংলাদেশ সব সময় গুরুত্ব পায়। আমার মেলায় একটা নির্দিষ্ট দিনে বাংলাদেশ দিবস পালন করি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা জানি বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ানে প্রতিবছর ভিড় উপচে পড়ে। তাছাড়া প্রতিবছর বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ানে জন্য যে জায়গা বরাদ্দ থাকে প্যাভেলিয়ান বানানোর জন্য, তৈরি সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এবছরও বাড়ানো আছে। কিন্তু, বাংলাদেশের সব প্রকাশককে এক জায়গায় আনা কখনই সম্ভব নয়। ফলে এর থেকে পরিসরে বাড়ানো আর সম্ভব নয়। এর কারণ কলকাতার বইমেলা প্রাঙ্গনন সীমিত জায়গা। তবে আমি মানছি বাংলাদেশের চাহিদা বেশি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ান হয় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে।  

গিল্ডের সভাপতি আরও বলন, এবছর আমরা ১২৪ জন প্রকাশক জায়গা দিতে পারেনি। তাদের কথা দিয়েছি আগামী বছর ৫০ বর্গফুট জায়গা হলেও দেবো। ফলে বুছতেই পারছেন। কলকাতা বইমেলা আপন গতিতে চলছে। এরজন্য কলকাতার পাঠক প্রকাশককের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ জানাই। 

বীথি চট্টোপাধ্যায় জানান পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যা ভাষার ভিত্তিকে তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন যে এভাবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, ভাবতে অবাক লাগে সেই ভাষা আমাদের বাংলা ভাষা, আমরা মাতৃভাষা। এই বাংলা ভাষায় দু'বাংলা ভাব প্রকাশ করি, রাগ প্রকাশ করি সেসব লেখার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। তবে হ্যা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। অবশ্য ঘেরা নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কেউ যদি বলে পাখির তো সীমানা হয় না। কিন্তু পাখির মধ্যে কোনো সন্ত্রাসবাদ নেই, যা মানুষের মধ্যে আছে, আমাদের মধ্যে আছে। তাই আমাদের ভিসা, পাসপোর্ট,  কাঁটাতারের দরকার হয়। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশ আমাদের গর্বের দেশ। বাংলাদেশের লোক বলতে আমার নিজেকে গর্ববোধ হয়। আমরা যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি বাংলাদেশ তাদের সবার দেশ। 

সুভাষ সিংহ রায় জানান, কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ দিবস পালন হয়তো আমাদের কাছে খুব গুরত্বপূর্ণ। নতুন মাত্রা যোগ হোক, প্রতিবার যাতে এই মেলায় ফিরে আসতে পারি। 

বই প্রেমীদের এই মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ঢোকার আবেদন জানিয়ে আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বই চিরজীবী হোক, পাঠক চিরজীবী হোক। 

এদিকে শনিবার সরকারি ছুটির দিন থাকায় বইমেলা প্রাঙ্গণ কার্যত জনজোয়ারে পরিণত হয়। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। উৎসবের চেহারা নিয়েছে প্যাভিলিয়নের ভেতরের পরিবেশ। বাংলাদেশি কবি, লেখক, সাহিত্যিকদের লেখা বইয়ের খোঁজে বুক স্টলগুলোতে ঢু মারছেন বইপ্রেমীরা। তবে বেশি সময় নিয়ে যে স্টলগুলোতে দাঁড়িয়ে লেখকদের বই উল্টাপাল্টা দেখবেন তার যো নেই। স্বভাবতই প্যাভিলিয়নের পরিসর বাড়ানোর দাবি জানান বইপ্রেমী, পাঠক ও বিক্রেতারাও। 

এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘যতই ডিজিটাল যুগের রমরমা হোক না কেন, ছাপা বইয়ের চাহিদা কোনোদিনই কমবে না। বছরের পর বছরও এর চাহিদা থাকবে।’ 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর