পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা আইনজীবী কৌস্তব বাগচীকে গ্রেফতার করেছে রাজ্যটির পুলিশ। শনিবার ভোর তিনটা থেকে টানা পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সকালের দিকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের অধীন বটতলা থানার কর্মকর্তারা।
যদিও ঠিক কি কারণে তাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতার করা হয়, তার সঠিক কোনও কারণ এখনও জানা যায়নি।
তবে প্রাথমিক ধারণা, শুক্রবার কলকাতায় একটি সংবাদ সম্মেলন থেকে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ও দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তোপ দেগে কিছু মন্তব্য করার অভিযোগের কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ২ মার্চ রাজ্যটির সাগরদিঘী বিধানসভার উপ-নির্বাচনের বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের জয়ের পরই রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর পরিবার নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মমতা বলেছিলেন, “তিনি (অধীর) এত বড় বড় কথা বলছেন, কিন্তু আমি যদি তার মেয়ের আত্মহত্যা নিয়ে জিজ্ঞাসা করি, তিনি কি কিছু বলতে পারবেন? তার গাড়ির চালকের খুন ও আত্মহত্যা নিয়ে আমি যদি বলি এটা জোড়া খুন তিনি কিছু বলতে পারবেন?”
মমতার ওই বক্তব্যকে ধিক্কার জানিয়েই শুক্রবার কলকাতায় রাজ্য কংগ্রেস দফতরে সংবাদ সম্মেলন মমতা ব্যানার্জিকে তীব্র নিশানা করেন কৌস্তব বাগচী।
সংবাদ সম্মেলন থেকে মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে লেখা রাজ্যটির সাবেক তৃণমূল বিধায়ক ও আইএএস কর্মকর্তা দীপক ঘোষের একটি বইকে হাতিয়ার করে কৌস্তভ বলেছিলেন, “একটি নির্বাচনে হেরে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই এই মন্তব্য করছে। আমাদের দল দীপক ঘোষের ওই বইটির সফট কপি ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দিয়েছি, কেউ চাইলেই তাকে এই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ করে সফট কপি দিয়ে দেওয়া হবে। হুমকি ফোন আসছে। যদি কিছু হয়ে থাকে তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দায়ী থাকবেন।”
সেই ঘটনার পর শনিবার ভোর তিনটার সময় তার ব্যারাকপুর ব্যাংক পার্কের বাড়িতে আসে কলকাতা পুলিশের অধীন বটতলা থানার পুলিশ। সাথে ছিল স্থানীয় টিটাগর থানার পুলিশ। এরপর টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিজের ফেসবুককে পোস্ট করে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কৌস্তব বাগচী লেখেন “অবশেষে গ্রেফতার হলাম।”
পরে গণমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জির কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। সেখানে রাজ্যের সমস্ত মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলাম তারা যেন মমতাকে নিয়ে লেখা সাবেক আই অফিসার দীপক ঘোষ এর বইটি পড়েন। কিন্তু রাজ্য সরকারের অভিমত এতে নাকি শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও কি অফেন্স তৈরি হয় তা ব্যক্তিগতভাবে আমার জানা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এতটা ভয় পাবেন তা আমি ভাবিনি।”
কৌস্তব বাগচীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ৩৫৪এ, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৬, ৫০৯, ১৪৩ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এই ঘটনার যথেষ্ট আতঙ্কিত কৌস্তব বাগচীর বাড়ির সদস্যরা। তার মা বলেন, “আমি সত্যিই গর্বিত এরকম একজন ছেলেকে জন্ম দিয়েছি বলে।” এরপর বন্দেমাতরম স্লোগান দিতে থাকেন তিনি।
এদিকে তার বাড়িতে পুলিশি উপস্থিতির পরেই কংগ্রেসের কর্মীরা তার বাড়িতে পৌঁছে যান। কৌস্তভকে গ্রেফতার করে যখন তাকে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়, তখনও মমতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন কংগ্রেসকর্মীরা।
গ্রেফতারের প্রতিবাদে শনিবার রাজ্যজুড়ে দিনভর কর্মসূচি নিয়েছে কংগ্রেস। দুপুরে কলকাতায় মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদ দেখাবে তারা।
এদিকে কৌস্তুভ বাগচিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতারের ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন বলে মন্তব্য করেছেন নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ।
বিডি প্রতিদিন/কালাম